সিত্রাং: পতেঙ্গা উপকূলের ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, খোলা আকাশের নিচে হাজারো মানুষ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকূলে প্রায় তিন শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। নগরের দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে হাজারো মানুষের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
নগরের দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, উপকূল সংলগ্ন জেলে পল্লীতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১৩০টি বসতঘর ও দোকানপাট।
প্রায় দুই মিটার উঁচু ঢেউয়ে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে বাড়ি ঘরে, ভেসে গেছে মাছের ঘের।
হাজারো মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আকমল আলী রোডের জেলে পল্লীসহ দক্ষিণ হালিশহর থেকে দক্ষিণ পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে প্রায় তিন শতাধিকের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, রাতের অন্ধকারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জীবন রক্ষায় বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিলেও জিনিসপত্র ও মালামাল সরিয়ে নিতে পারেনি। ফলে পরিবার গুলোর লাখ লাখ টাকার ঘরসহ সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সাগরে ভেসে গেছে তাদের চোখের সামনেই।
স্থানীয় বাসিন্দা চম্পা রানী জলদাশ বলেন, 'রাত সাড়ে ১০টায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে আমি তিন সন্তান নিয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ঘূর্ণিঝড়ের পর বাড়ি ফিরবো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আমাদের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়েছে। খাবার-পোশাক কিছুই পাইনি। আমার স্বামীর প্রায় লাখ টাকার জাল ভেসে গেছে।'
পতেঙ্গা বেড়িবাঁধে হাজারখানেক বসতি জেলেদের। সাগর পাড়ে লিজের জায়গায় যারা নিজ উদ্যোগে ঘর তৈরি করেছে বসবাস করছিলেন তারা। গতকাল রাতে বেড়িবাঁধে থাকা প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
স্থানীয় দোকান মালিক শিবু প্রসাদ দে বলেন, 'বেড়িবাঁধের বাসিন্দাদের মধ্যে ৭০ জন বদ্দার (জেলে), ৮০টি সাধারণ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে খাবারের দোকান, মুদি ও তেলের দোকানসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমার ৪টি দোকানের ক্ষতি প্রায় ৩০ লাখ। ৪টি মাছের ঘের থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।'
বিশেম্বর জলদাশ নামে এক ব্যক্তি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর দুইটি বোট, ২০টি বিনি জালসহ প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ধরার মালামাল সাগরে ভেসে গেছে। তার অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোন সহায়তা পাননি তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, কাউন্সিলর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা পেলে চসিকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।