বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনায় যুক্ত হচ্ছে পর্যটন বাস
গতকাল শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ফোকাস পয়েন্ট নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় চালু হতে যাওয়া পর্যটক বাস সার্ভিসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহ থেকে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত দুটি বাস নিয়ে চালু হবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম। শুক্র ও শনিবার সপ্তাহে দুইদিন এই সার্ভিস চালু থাকবে।
গত ২৮ নভেম্বর উদ্বোধন হওয়া বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেল ইতোমধ্যেই যোগ করতে শুরু করেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত পাতালপুরী দিয়ে চলে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল দেখতে প্রতিদিন ভীড় করছেন চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা হাজারো মানুষ।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘুরে টানেল পার হয়ে চলে যাচ্ছেন নদীর ওপারে আনোয়ারায় অবস্থিত পার্কি সমুদ্র সৈকতে। তবে, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে না টানেল।
টানেল ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আনোয়ারার পার্কি সমুদ্র সৈকত এলাকার আশেপাশে গড়ে উঠছে নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট ও পার্ক। আবার চট্টগ্রামের পর্যটন খাতকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চালু হতে যাচ্ছে বেসরকারি পর্যটক বাস।
যদিও টানেল পাড়ি দেওয়া যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা হবে সীমত।
ফোকাস পয়েন্টের কর্ণধার আশরাফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশের মানুষের জন্য চট্টগ্রামের পর্যটন খাতকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে 'চট্টগ্রাম দেখবে বাংলাদেশ' স্লোগানে আমাদের এই সেবা।"
"এক বাসে চড়ে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সারাদিনে অনেকগুলো জায়গা খুব সুন্দর ভাবে ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটকরা," বলেন তিনি।
এদিকে, বছরের শুরুতে চালু করা টাইগার পাস থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চলমান পর্যটন বাস সার্ভিস বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে পার্কি সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত বর্ধিত করার পরিকল্পনা করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, "ইতোমধ্যে টানেলের এপার থেকে ওপারে ভ্রমণের জন্য চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু করা হয়েছে। তবে, টানেল কর্তৃপক্ষ ছাদখোলা বাস নিয়ে টানেল পার হওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করেছি অনুমোদন নিতে। নাহলে সাধারণ বাস দিয়েই পর্যটক বাসের যাত্রা বর্ধিত করার পরিকল্পনা আছে।"
ফোকাস পয়েন্ট রুট
বাসটি সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রবিন্দু টাইগারপাস যাত্রা শুরু করে প্রথমে থামবে পাহাড়ঘেরা বায়েজিদ লিংক রোড়ে। সেখানে পর্যটকদের ঘুরাঘুরি ও ছবি তোলার জন্য দেওয়া হবে ৩০ মিনিট বিরতি।
এরপর বায়েজিদ লিংক হয়ে ফৌজদার হাট-ডি সি পার্কে গিয়ে পর্যটকদের এক ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হবে পার্কটির লেকে নৌকা ভ্রমণ ও নতুন করে সৃজন করা ফুলের বাগানে সময় কাটানোর জন্য।
পরে বাসটি ডি সি পার্ক থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মনোরম দৃশ্য দেখাতে দেখাতে ছুটে যাবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সেখানেও সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা এক ঘণ্টা সময় পাবেন।
তারপর শুরু হবে বঙ্গবন্ধু টানেলের বিস্ময়কর পাতালপুরী ভ্রমণের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা নেওয়ার পালা। উজ্জ্বল আলোয় শোভিত টানেল দেখতে দেখতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাসটি পাড়ি দেবে কর্ণফুলী নদী। পরে বাসটি গিয়ে থামবে সবুজ ঝাউগাছে ঘেরা বিস্তীর্ণ বালুকাময় পার্কি সমুদ্র সৈকতে।
সৈকতের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের জলরাশীতে মনোরম সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ শেষে সন্ধ্যা ৬টায় পর্যটক বাসটি কোরিয়ান ইপিজেড, শাহ আমানত সেতু, বহদ্দারহাট ও আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার হয়ে বদলে যাওয়া চট্টগ্রামে নান্দনিক সন্ধ্যার দৃশ্য দেখাতে দেখাতে ফিরে আসবেন টাইগার পাসে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, "বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পর, পরিবার, প্রিয়জন,বন্ধু বান্ধব নিয়ে সুন্দর একটি ডে-ট্যুরের সাক্ষী হতে পারবেন আমাদের পর্যটক বাসে। প্রতি বাসে ৪৬ জন করে শুক্র ও শনিবার দুটি করে বাস ছাড়া হবে। বাড়তি যাত্রী থাকলে একদিনে প্রয়োজনে পাঁচটি বাস চালুর পরিকল্পনাও আছে আমাদের।"
পর্যটকের চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তীতে সপ্তাহে প্রত্যেকদিন সার্ভিস চালু করার কথাও ভাবছেন তারা।
গ্রুপ ট্যুর, করপোরেট ট্যুর বা ফ্যামিলি ট্যুরের জন্য সপ্তাহের যেকোনো দিন কেউ চাইলে পুরো বাস বুকিং করতে পারবেন। প্রত্যেক বাসে একজন অভিজ্ঞ সুপারভাইজার ও একজন অভিজ্ঞ ম্যানেজার, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে ঘুরাঘুরিসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে পুরো ট্যুর হোস্ট করা হবে বলে জানান আশরাফ।
তিনি আরো বলেন, জনপ্রতি ৪৯০টাকা দিনব্যাপী এই প্যাকেজের অনলাইন-অফলাইন দুইভাবেই বুকিং করতে পারবেন পর্যটকরা রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত। সকালের নাস্তা ও পার্কের এন্ট্রি ফি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কেউ চাইলে প্যাকেজ বুকিংয়ের সময় লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে রাখতে পারেন।
তবে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি বা ছবি দিয়ে প্যাকেজ বুকিং দিতে হবে।