চুয়াডাঙ্গায় টানা ৩ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড
চুয়াডাঙ্গায় টানা তিনদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এতে হাসপাতালে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা এবং ভিড় বেড়েছে শীতবস্ত্রের দোকানে।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই রেকর্ড ভেঙে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) হয় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবারও (১৫ ডিসেম্বর) চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে সকাল ও সন্ধ্যায় কুয়াশাচ্ছন্ন চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের চলাচল অনেকাংশেই কমে গেছে। রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকসহ শহরের বিভিন্ন মোড়ের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো সন্ধ্যার পর থেকেই কমতে শুরু করে। তবে ভিড় বেড়েছে শহরের নতুন ও পুরানো শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে।
শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। প্রাপ্ত বয়ষ্কদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
চুয়াডাঙ্গার ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালে শিশুদের জন্য ১৫টি শয্যা বরাদ্দ থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে শয্যার থেকে কয়েকগুণ বেশি ঠাণ্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ও অ্যাজমা আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও, হাসপাতালের বর্হিবিভাগে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কোনো কোনো দিন দেড় শতাধিক শিশুও চিকিৎসা নিচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, "শীত বাড়ায় গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে শতাধিক শিশু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আবার প্রতিদিন বহির্বিভাগেও ১৫০ জনেরও বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিয়ে হাসপাতালের সেবিকাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "শীতের সময় দেখা যায় যে শিশুরা ঠিকমতো গরম কাপড় পড়তে চায় না, কানটা হয়তো বাইরে থাকে, ঠাণ্ডা পানি খায়, ফলে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশুরা এ সময় ঠাণ্ডা পানি ও ঠাণ্ডা বাতাসের সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে পারে না। শীতের সময় বাতাসে জীবাণু বেশি থাকে। বিশেষ করে ভাইরাস বেশি থাকে, যা শ্বাস নালীর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে ইনফ্লয়েঞ্জা ও মামসের মতো রোগের সৃষ্টি করে।"
শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচতে ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন পরামর্শ দেন, এ সময় বাইরের খাবার শিশুদের একদমই খাওয়ানো উচিত নয়। শীতজনিত এসব রোগের হাত থেকে রক্ষায় ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের কেবল বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সকালে ও সন্ধ্যার পর শিশুদের অযথা বাড়ির বাইরে বের করা যাবে না। শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গরম কাপড় পরাতে হবে। তারপরেও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের নিকট নিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, শনিবার ৯ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর এটিই চলতি মৌসুমে সারাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও কমবে। গত ১০ ডিসেম্বর জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন থেকে তাপমাত্রা এরচেয়ে আর বাড়েনি।
তিনি আরও জানান, "আকস্মিক তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং উত্তর থেকে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়ার কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ভোর থেকে কুয়াশা পড়ার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে একটু দেরিতে।"