চেক জালিয়াতির অভিযোগে ডিএসএ মামলায় আটক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ
দুই ব্যাংকের ৩৬৬ কোটি টাকার চেক প্রতারণা মামলায় ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নুর উন নবীকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক হালিশহর ও আগ্রাবাদ শাখা এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার দায়ের করা মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ ও ৫ম আদালত কাজী শরীফ উদ্দিন এবং ৬ষ্ঠ আদালত মেহনাজ রহমান আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) এই আদেশ দেন।
এর আগে ২০২০-২২ সালের বিভিন্ন সময় এই দুই ব্যাংক বলাকা গ্রুপের কর্ণধার নুর উন নবীর বিরুদ্ধে এন আই অ্যাক্টে (চেক প্রতারণা) পাঁচটি মামলা দায়ের করে।
ব্যাংকের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, মামলার পর থেকে দীর্ঘদিন আত্নগোপনে থাকেন খেলাপি ব্যবসায়ী নুর উন নবী। সম্প্রতি ঢাকার গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
কারাগারে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ায় এই খেলাপি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিকে আগামী ১৮ জানুয়ারি স্বশরীরে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়।
ব্যাংকের পক্ষে মামলা পরিচালনায় অ্যাডভোকেট এ.এইচ.এম জসিম উদ্দিন, এ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন খালেদ, এ্যাডভোকেট মো. হাসান আলী, এ্যাডভোকেট মো. বদরুল হাসান, এ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আরমানও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ৪০০ কোটি টাকার চেক প্রতারণা মামলায় নুর উন নবীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (৬ষ্ট) আদালত। ব্যাংকটির হালিশহর শাখার ১৫০ কোটি টাকার চেকের মামলায়ও এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আদালতের সমন জারি রয়েছে।
গত বছরের ১ জুন কমার্স ব্যাংকের ১২৮ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে নুর উন নবীর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয় আদালত।
পাওনাদার ব্যাংকের তথ্যমতে, বলাকা গ্রুপের এই কর্ণধারের কাছে কমপক্ষে ৫ ব্যাংকের ৯০০ কোটি টাকা পাওনা খেলাপি হয়ে গেছে। এরমধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের দুই শাখার ৫৫০ কোটি টাকা, কমার্স ব্যাংকের ১২৮ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ১৫০ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ২৫ কোটি টাকা ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পাওনা রয়েছে।
আশির দশকে লক্ষীপুর থেকে চট্টগ্রামে এসে প্রথমে সুতার ব্যবসা শুরু করেন নুর উন নবী। ওই সময় বিভিন্ন গার্মেন্টেস এ সুতা সরবরাহ করতেন তিনি। এরপর ব্যবসা সম্প্রসারণ করে 'বলাকা গ্রুপ' নাম দিয়ে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। কিন্তু ঋণের সেই টাকা ফেরত দেন নি। ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঋণ সুবিধা নিলেও সেই টাকার একটা অংশ কুয়েতে স্বর্ণের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাকি টাকা কৌশলে সরিয়ে তার ছেলের নামে নতুন করে গড়ে তুলেছেন 'ড্রিম গ্রুপ'।
ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে নুর উন নবীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। নুর উন নবী ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আফসার উদ্দিন রোমান, মো. আবু সাইদ সাজু, মো. স্বাধীন মিয়া ও মো. আব্দুস সালাম।
গত রোববার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।