লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ২০ কি. মি.
বনবিভাগের আবেদনের প্রেক্ষিতে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার রাখতে রেলওয়েকে নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এই তথ্য নিশ্চিত করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এই বনে ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে প্রতিবছর অনেক বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। এখন গতিসীমা কম হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ট্রেনে যাওয়া যাত্রীরা বনটাকে উপভোগ করে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। গতি কমানোর ফলে বিরল প্রজাতির প্রাণীগুলোও বেঁচে থাকবে।"
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারে নিয়ন্ত্রিত রাখতে অনেকদিন যাবত চেষ্টা করেছে বন্যপ্রাণী বিভাগ। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে গতিসীমা কমাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটার রাখতে রেলপথ মন্ত্রণালয় রেলওয়েকে নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ একটি চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ বন। ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ এই বনে উল্লুক, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, বনরুই, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, বন্য শূকর, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী আছে। লাউয়াছড়া ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতিবছর উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক ও রেলপথে অর্ধশতাধিক বিপন্ন, বিরল বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। নানারকম বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি বনটিকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। কিন্তু এই বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ। এই রেলপথটি বন্যপ্রাণীর নিরাপদ চলাচলে একটি বড় ঝুঁকি হয়ে আছে।
প্রায় প্রতি বছরই দ্রুতগতির ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অনেকগুলো বিরল, বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটছে।