নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় খুশি যাত্রীরা
পবিত্র শবে কদরের ছুটির মাধ্যমে শুরু হওয়া ঈদের ছুটির প্রথম দিন থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে চিরচেনা যানজটের পরিবর্তে দুপুরের পর থেকেই কমতে থাকে গণপরিবহন ও যানবাহনের চাপ।
তবে মহাখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে গাজীপুর, সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে কাঁচপুর, গাবতলী থেকে হেমায়েতপুর হয়ে সাভারসহ ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলোতে বিকাল থেকেই যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়তে থাকে।
তবে অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার সড়ক পথে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি অনেক কম হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীরা। যদিও টিকেট সংকটের কথা বলে কিছু বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
আর শতভাগ অনলাইনে টিকেট ও স্টেশনে প্রবেশের পথে তিন দফায় কড়াকড়ি চেকের কারণে বিনা টিকিটের যাত্রী কম থাকায় এবার রেলে ঈদযাত্রায়ও স্বস্তির আভাস দেখা যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সুবাদে সদরঘাটে লঞ্চযাত্রীদের চাপও তুলনামূলক কম।
সড়কে চাপ কম থাকায় দূরপাল্লার বাসযোগে অনেকটাই নির্বিঘ্নেই রাজধানী ছাড়ছেন ঈদ যাত্রীরা। বাড়তি চাপের কারণে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর সহ বিভিন্ন মহাসড়কে গাড়ির গতি ছিল তুলনামূলক কম।
টিবিএস থেকে টেলিফোন করা হলে গতকাল হটলাইন থেকে বলা হয়, দিনব্যাপী নির্বিঘ্নেই যানবাহন চলাচল করেছে। তবে কিছু এলাকায় সড়কে বাড়তি চাপ ছিল।
মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে দায়িত্বে থাকা সওজের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সামিউল কাদের খান বলেন, দুপুরের দিকে ঢাকাগামী রোডে কিছুটা জ্যাম থাকলেও চট্টগ্রাম অভিমুখী সড়কে চাপ ছিল কম।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ছোট একটা দুর্ঘটনার কারণে চট্টগ্রাম অভিমুখী সড়কে জট লেগে যায়। সন্ধ্যার আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সাতটার দিকে সড়কে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে গাড়ির চাপ সামান্য বেশি দেখা গেলেও অন্যান্য ঈদের তুলনায় অনেক কম।
তবে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় বিলম্বের কারণে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে বাড়তি চাপ থাকলেও বিকেলের দিকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
শিমুলিয়া ঘাটে মোটরসাইকেলের ভিড় দেখা যায়। গতকাল ফেরীতে মোটরসাইকেল পারাপার হলেও আজ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মোটর সাইকেল চলবে। এ লক্ষ্যে মোটর সাইকেলের জন্য একটি টোল প্লাজা খোলা হয়েছে। এই টোল প্লাজায় মিনিটে চারটি মোটর সাইকেলের টোল আদায় করা যাবে বলে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর আহমেদ জানিয়েছেন।
এদিকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মহাসড়কের টোল আদায় শুরু হওয়ায় সেতুর সংযোগকারী এক্সপ্রেসওয়েতে চাপ কমে আসবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সড়কে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার গাড়ি চলাচল করলেও সংখ্যাটি গতকাল ছিল দ্বিগুণ।
এদিকে বিমানবন্দরের সামনে বিআরটি প্রকল্পের একটি উড়ালসড়ক যানবাহনের জন্য খুলে দেয়ায় বিমানবন্দর সড়কেও চাপ কিছুটা কম দেখা গেছে। তবে রাস্তায় এলোপাতাড়ি গাড়ি পার্ক করে রাখায় গাজীপুর এলাকায় যানজটে পড়েছেন যাত্রীরা।
শৃঙ্খলা এসেছে ট্রেনের শিডিউলে
কুমিল্লায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্ঘটনার কারণে মঙ্গলবার পর্যন্ত অধিকাংশ ট্রেন এক ঘণ্টা করে বিলম্বে ছাড়লেও গতকাল প্রায় শতভাগ ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর ছেড়েছে।
সকাল ছয়টায় নির্ধারিত সময়ে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের মাধ্যমে শুরু ট্রেনে তৃতীয় দিনের ঈদ যাত্রা। এর পরে চিলাহাটিগামী নলিসাগর এক্সপ্রেস ছাড়া অন্য কোন ট্রেনের কোন বিলম্ব হয়নি।
আগের দিন যাত্রী কিছুটা কম থাকলেও গতকাল প্রতিটি ট্রেনই ছিল পূর্ণ। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসামাত্রই হুমড়ি খেয়ে পড়েন যাত্রীরা। তবে ৯ এপ্রিল যারা অগ্রিম টিকেট কিনতে পেরেছিলেন, তারাই গতকাল ট্রেন যাত্রা করতে পেরেছেন।
এর আগে তিন দফায় চেকিংয়ের পর শুধু টিকেটধারী যাত্রীরাই স্টেশনে প্রবেশ করতে পেরেছেন। অনেকেই বিমানবন্দর থেকে টিকেট করলেও ভোগান্তির কথা বিবেচনায় কমলাপুর থেকেই ট্রেন উঠছেন।
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার টিবিএসকে বলেন, ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় প্রতিটি ট্রেনে শোভন শ্রেণির মোট আসন সংখ্যার ২৫% স্ট্যান্ডিং টিকেট দেয়া হয়েছে।
সদরঘাটেও স্বস্তি
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। স্বল্প দূরত্বের জেলাগুলোতে যাত্রী পৌঁছে দিতে লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ছেড়ে যাচ্ছে।
সদরঘাট থেকে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠিগামী লঞ্চগুলো ছেড়ে গেছে। যাত্রী চাপ থাকলে এদিন ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় অনেকে টিকিট কাটেন। এছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকা-বরিশাল-কাউখালী-তুষখালীগামী লঞ্চের সামনে যাত্রীর জন্য হ্যান্ডমাইক দিয়ে হাঁকডাক করে যাত্রীদের আকর্ষণ করতে দেখা গেছে কর্মীদের।
বিআইডব্লিউটি'র সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেন বলেন, 'আগে সদরঘাট থেকে ২০০টি লঞ্চ ছেড়ে যেত, এখন চলাচল করে মাত্র ৪৬টি লঞ্চ। এবার ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই, এমন অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।'