অবশেষে করতোয়া নদী প্রবাহ ভরাটের অভিযোগে টিএমএসএসের বিরুদ্ধে মামলা
অবশেষে রাতের আঁধারে বগুড়ায় করতোয়া নদীর মূল প্রবাহ মাটি ফেলে ভরাটের অভিযোগে বেসরকারি সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) বিরুদ্ধে মামলা করেছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বৃহস্পতিবার রাতে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় এই মামলা করেন।
এর আগে গত ১ মে দিবাগত রাতে মাটি ফেলে নদী প্রবাহ ভরাটের সময় পাঁচটি ট্রাক জব্দ করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বগুড়ার মমইন ইকোপার্কের বালা কৈগাড়ী কাঁঠালতলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকা থেকে এসব ট্রাক জব্দ করা হয়।
ওই সময় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেন নির্বাহী হাকিম ও জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. নুরুল ইসলাম। কিন্তু ঘটনায় দুদিন পেরিয়ে গেলেও মামলায় গড়িমসি করছিল পাউবো কর্তৃপক্ষ।
নদী সংক্রান্ত অপরাধ হওয়ার পরেও দায় এড়িয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলছিলেন, 'ওই ঘটনায় কোনো ম্যাজিস্ট্রেট তাকে মামলা করার নির্দেশ দিতে পারেন না। নদীর বিষয়ে মামলা করার কাজ তার নয়।'
বিপরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার নুরুল ইসলাম বলছেন, 'আদেশনামায় নদী ভরাটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পাউবোকে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা না করার কোনো কারণ নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অর্ডার শিটও সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়েছে ।'
পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া সদর থানায় এজাহার দাখিল করে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান।
এজাহারে বলা হয়, পাউবো, সদর উপজেলা ভূমি, বগুড়া পৌরসভা, টিএমএসএস ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সার্ভেয়ারদের নিয়ে যৌথভাবে করতোয়া নদী জরিপের কাজ চলছে। এই জরিপ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় নদী ভরাট, খনন বা স্থাপনা নির্মাণ স্থগিত রাখার বিষয়ে গত ২০ এপ্রিল একটি নোটিশ জারি করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ সেই নোটিশ অমান্য করে নদী ভরাট করছিল।
এটি বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী জরিপ চলমান থাকা অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে করতোয়া নদী ভরাটকরণে মামলা রুজু করা হলো।
এজাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বগুড়া সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দীকী। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা থানায় এসে মামলার অভিযোগ দিয়েছেন।
মমইন ইকোপার্কের বালা কৈগাড়ী কাঁঠালতলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকায় মাটি ও বর্জ্য ফেলে নদীর মূল প্রবাহ বন্ধ ও ভরাটের দায়ে গত ১৮ মার্চ টিএমএসএসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর জেলা প্রশাসক, পাউবোর খসড়া এক জরিপে শুধুমাত্র ওই এলাকায় নদীর সীমানা জরিপ চালানো হয়। জরিপে নদীর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়।
এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এরপর তিনি বলেন, নদীর সীমানা এভাবে নির্ধারণ হতে পারে না। নদীর মধ্যে সীমানা খুঁটি দিয়ে তার মূল প্রবাহকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এটা ভয়ানক অপরাধ।
এরপর বেলার নির্বাহী পরিচালক বগুড়া জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে একটি স্মারকলিপি দেন। এ সময় রিজওয়ানা হাসান জেলা প্রশাসনকে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করেত অনুরোধ করেন। তখন জেলা প্রশাসক বলেন, নদীর সীমানা পুনরায় নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় টিএমএসএসের ভরাট কাজ বন্ধ রাখার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।
তবে জেলা প্রশাসনের এই মৌখিক নির্দেশনা মানেনি টিএমএসএস। গত ৩০ এপ্রিল প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ওই এলাকায় ভরাটের বিষয়টি জানান দেন। বগুড়ার পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রকাশ্যে পত্রিকায় সংবাদ আকারে বিজ্ঞাপন পাঠিয়ে টিএমএসএস প্রশাসনের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
মমইন ইকোপার্ক এলাকায় টিএমএসএসের বিরুদ্ধে করতোয়া নদীর ৪ দশমিক ৯ একর জমি দখলের প্রমাণ রয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ টিএমএসএস। তাদের দাবি, জেলা প্রশাসনের জরিপে উঠে আসা ৪ দশমিক ৯০ একর জমি সরকারের কাছ থেকে ১৯৯৫ সালে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে।