সিলেট সিটি নির্বাচন: আচরণবিধি ভেঙে প্রতীক নিয়ে প্রচারে প্রার্থীরা
এখনো প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়নি। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সীমাও শেষ হয়নি। অথচ তার আগেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আর আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী রীতিমত প্রতীক নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর সিলেটে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২ জুন। তবে তার আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা।
সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শনিবার রাতে নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় তার সমর্থনে 'মির্জাজাঙ্গাল আওয়ামী পরিবার' কর্মীসভার আয়োজন করে। এতে আনোয়ারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় আগতদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান ও 'নৌকা' প্রতীকের ছবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়।
এছাড়া প্রতিদিনই নগরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা নৌকার মার্কায় ভোট চেয়ে প্রতীকের ছবি সম্বলিত লিফলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করছেন।
রোববার দুপুরে নগরের সবুজ বিপণিমার্কেটে তার সমর্থনে প্রচারপত্র বিলি করে মহানগর যুবলীগ। প্রচারপত্রে লেখা রয়েছে- 'সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।' এতে আনোয়ারুজ্জামানের ছবি এবং নৌকা প্রতীকের ছবিও যুক্ত রয়েছে।
এছাড়া প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন আনোয়ারুজ্জামান। প্রতিদিনই গড়ে ৪ থেকে ৫টি মতবিনিময় সভা করছেন তিনি। প্রচারে আনোয়ারুজ্জামান এগিয়ে থাকলেও বসে নেই অন্যরাও। মতবিনিময়, কুশল বিনিময়, জুমার নামাজে অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন তারা।
পিছিয়ে নেই সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। নিজ নিজ ওয়ার্ডে প্রতিদিনই মতবিনিময় সভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন তারা।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালায় প্রতীক পাওয়ার আগে প্রচার শুরুতে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি কেউই তা মানছে না। এমনকি প্রতীক ব্যবহার করেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন প্রার্থীরা। এটি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রত্যেক প্রার্থীকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনকেও এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।'
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, 'আমি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করিনি। কোন পোস্টার-লিফলেটও তৈরি করিনি। তবে আমার সমর্থনেও কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে লিফলেট-পোস্টার তৈরি করেছেন। যা আমার চোখেও পড়েছে। এটি করা ঠিক হয়নি। আমি সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক করবো। আমাদের অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।'
এই সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। আরিফ এখনো নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। ২০ মে নগরে সমাবেশ করে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে প্রার্থিতা এখনো নিশ্চিত না হলেও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন আরিফুল হক। কুশল বিনিময়ের নামে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরিফ।
রোববার নগরের ২১ নং ওয়ার্ডে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করেন আরিফুল হক।
এ প্রসঙ্গে আরিফুল হক বলেন, 'আমি প্রার্থী হবো কি না তাও এখনো নিশ্চিত নয়। তাই প্রচার চালানোর তো প্রশ্নই আসে না। প্রার্থী হবো কি না এ ব্যাপারে ভোটারদের মতামত জানতেই আমি নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাচ্ছি। কিন্তু কোথাও কোন ভোট চাচ্ছি না।'
আরিফ অভিযোগ করে বলেন, 'আওয়ামী লীগের প্রার্থী কোন নিয়ম নীতিই মানছেন না। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন তিনি। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।'
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলেও অভিযোগ করেন আরিফ।
এছাড়া সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান নগরের ভোটারদের সঙ্গে কুশল ও মতবিনিময় করছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের সাগর দিঘীরপাড়ে কর্মজীবী নারীদের সাথে মতবিনিময় করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।
এছাড়া নগরের ৪২টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়ক ছেয়ে আছে তাদের ব্যানার, ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ডে। এছাড়া পাড়ায় পাড়ায় সভার আয়োজন করে ভোট চাইছেন তারা। নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
শুক্রবার রাতে নগরের শিবগঞ্জ সেনপাড়ায় পরামর্শ সভার আয়োজন করেন ২০ নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মিঠু তালুকদার।
সভায় মিঠু তালুকদার বলেন, 'সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসাবে ছাত্র ও যুব সমাজ এলাকার উন্নয়নে যোগ্য প্রতিনিধি বাছাই করবে। আমি জনগণের মনোনীত প্রার্থী। তাই এই ওয়ার্ডের জনগণই হলো আমার শক্তি এবং প্রেরণা।'
এ বিষয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, 'প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর কোন সুযোগ নেই। যারা এমনটি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। ২৩ মে পর্যন্ত এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১ জুন। এরপর শুরু হবে প্রচারণা, যা চলবে ভোটগ্রহণের একদিন পূর্বপর্যন্ত।