জুনে ভয়ংকর ডেঙ্গু পরিস্থিতি, সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/06/30/dengue-patient-tbs.jpg)
চলতি জুন মাসের প্রথম ২৬ দিনে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫,৫৮৭ জন এবং মারা গেছে ৩২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে কখনও জুন মাসে এতো বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু ঘটেনি।
গত বছরের জুনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩৭ এবং একই সময়ে মৃত্যু হয়েছিল মাত্র একজনের। এর আগের দুই মহামারি-আক্রান্ত বছরেও ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যু তুলনামূলক কম ছিল। ২০১৯ সালের জুনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১,৮৮৪ জন এবং এতে মৃত্যু হয় ৭ জনের।
এদিকে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭,৬০৯ জন এবং মারা গেছেন ৪৫ জন।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ মোড় নেবে; কোরবানির ঈদের পর পশুর বর্জ্য এবং এরপরে আসন্ন বৃষ্টির মৌসুমের কারণে সংক্রমণ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশে সাধারণত ডেঙ্গুর সিজন জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে এ বছর মে মাস থেকে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। তাই বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু মোকাবেলায় এখই মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এ বছর মৌসুমের আগেই ডেঙ্গু রোগী বেশি ছিল; রোগী আরও বাড়বে। বৃষ্টির মৌসুমে ডেঙ্গু রোগী যখন বাড়তে শুরু করে, তখন আর কমেনা। এখন রোগী যেহেতু বাড়ছে, জুলাই-আগস্টেও রোগী আরও বাড়বে।"
"ডেঙ্গুর বিষয়ে মানুষ জানে, মানুষ সচেতন; কিন্তু মানুষের মধ্যে গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা আছে। আমি পরশু ফিল্ড ভিজিটে গিয়েছিলাম। প্রায় বাড়িতে এডিশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সিটি কর্পোরেশন তো এসব বাসা-বাড়ির মশা মারতে পারবে না। নিজেদের বাড়িঘর পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা- এটা সবার দায়িত্ব," যোগ করেন তিনি।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হটস্পট ম্যানেজমেন্টের ওপর জোর দিয়ে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, "যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, সিটি কর্পোরেশন সেসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে উড়ন্ত মশা মেরে ফেলতে হবে। মানুষজনকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্পৃক্ত করতে হবে। বাসায় যেন এডিশের লার্ভা না জন্মায়, সেজন্য জমা পানি ফেলে দিতে হবে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর জ্বর হলেই পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৩০০-এর বেশি। এরমধ্যে গত শনিবার একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০০ জন; যা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
ঢাকায় ১,০২২ জনসহ মোট ১,৩৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী এখন সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় তিন সরকারি হাসপাতাল- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানান যায়, ঈদের ছুটিতে হাসপাতালগুলোতে অন্যান্য রোগীর চাপ কমলেও ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে প্রতিদিন। ডেঙ্গু রোগী সামলাতে আলাদা প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, "ডেঙ্গু রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।"
মুগদা হাসপাতালে সোমবার ২৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ১২০ বেডের দুটি আলাদা ওয়ার্ড করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুদের জন্যেও করা হয়েছে আলাদা ওয়ার্ড।
ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, "রোগীদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। ঈদে ডেঙ্গু রোগী সামলাতে ডাক্তারদের রোস্টার ডিউটি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, রোগীদের কোনো সমস্যা হবেনা।"
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, "ঈদের কারণে হাসপাতালে ২৫% রোগী কমেছে, কিন্তু ডেঙ্গু রোগী কমছে না। ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়লে আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হবে।"
গত বছর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়, যা ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যুর পর সর্বোচ্চ। এছাড়া, একই সময়ে সারাদেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২,৪২৩ এবং মোট সুস্থ হয়েছিলেন ৬১,৯৭১ জন।