নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার বায়ুমান ও জ্বালানি উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে: বিশেষজ্ঞরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার বায়ুমান ও জ্বালানি উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। বায়ুমান ও জ্বালানি উন্নয়নে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর কনফারেন্স হলে, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং বিআইপি'র যৌথ আয়োজনে 'বায়ুমান এবং জ্বালানী উন্নয়নে নবায়নযোগ্য শক্তির ভূমিকা' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা একথা বলেন।
মূল বক্তব্যে ক্যাপস এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, "বায়ুমান ও জ্বালানি উন্নয়নে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হল বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস ও বায়ুর দূষক নিঃসরণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা।"
তিনি তার বক্তব্যে দেশে বায়ুমান উন্নয়নে সকল কয়লা, তেল ও গ্যাসভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্টকে পূর্বের মত লাল শ্রেণীভুক্ত রাখাসহ ৪টি সুপারিশ প্রদান করেন।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে এককভাবে পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে শেষ করতে পারবে না, এর জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়কেও সাহায্য করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের স্ট্যান্ডার্ড একই হওয়া উচিত, তবে দেশের পরিবেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিজস্ব একটি রোডম্যাপ ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।"
তিনি বলেন, "বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০২২ কে অকার্যকর ভাবার কোন সুযোগ নেই, এতে কিছু ত্রুটি আছে তবে আমাদেরকে বিধিমালার ভালো দিকগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকারি অন্যান্য সংস্থার তুলনায় আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর কিছুটা হলেও কাজ করে। কিন্তু তাদের বড় সংকট রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব। রাজনৈতিক সমর্থন পেলে ভালো কাজ করার নজির এ সংস্থাটি আগেও দেখিয়েছি।"
নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, "রাজউক বিল্ডিং প্ল্যানের নির্দেশনায় সোলার প্ল্যান বসানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে এই সোলারগুলোর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারকে সঠিক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। বায়ু দূষণের ব্যাপারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। আইন এর ব্যাপারে বিশেষ করে বায়ু দূষণের রোধে কঠোর হতে হবে।"
সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিইডি) এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, "নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে, আমরা বায়ুতে নির্গত ক্ষতিকারক দূষকের পরিমাণ হ্রাস করতে পারি এবং মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর বায়ু দূষণের প্রভাব হ্রাসও করতে পারি।"
ইন্সটিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, "বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, তাই বায়ুকে দুষণমুক্ত রাখতে হবে। বায়ুদূষণ রোধে ও জ্বালানি নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য শক্তির কোন বিকল্প নেই।
বিআইপি এর উপদেষ্টা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. আকতার মাহমুদ বলেন, "নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের মাধ্যমে বায়ুমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণা সংগঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তিকে ব্যবসায়ীদের পণ্য হিসেবে পৌঁছাতে পারলে এটির প্রসার করা সম্ভব। সরকারকে বায়ু দূষণরোধে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সচেষ্ট হতে হবে, তা নাহলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছুই দেখে যেতে পারবো না।"
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, "শুধু সরকার একা কাজ করে এই দূষণ কমাতে পারবেনা। ব্যক্তি পর্যায়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে আগ্রহ দেখাতে হবে, দেশের নাগরিক হিসেবে সবাইকে সবার অবস্থান থেকে বায়ু দূষণ কমাতে সচেষ্ট হতে হবে।"