কোনোভাবেই বিএনপিকে রাজপথ দখলের সুযোগ দেয়া হবে না: আওয়ামী লীগ
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার পতনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। আর রাজনীতির মাঠ দখলের সুযোগ না দিতে আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের যেকোনো কর্মসূচি প্রতিহত করতে আরো কঠোর অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
সরকার পতন এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
নির্বাচনের আর বেশি দিন বাকি নেই, তাই সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মী এবং সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে এনে দলটি ঢাকা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবারের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের বড় ধরনের লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিতে পারে বিএনপি।
আর বিএনপির বড় কর্মসূচির ঘোষণা এলে রাজপথ দখলে রাখতে আওয়ামী লীগও বড় কর্মসূচির ঘোষণা দেবে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথ দখলের সুযোগ দেয়া হবে না।
বুধবার সমাবেশের নামে আর বিএনপির ঢাকা অবরোধের চেষ্টা ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দলের হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে।
অবরোধ চেষ্টা ঠেকানোর জন্য বিএনপির সমাবেশের বিপরীতে আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে 'শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে'র কর্মসূচী দিয়েছে।
বিএনপির এই অবরোধের চেষ্টা ঠেকাতে গত সোমবার রাজধানীতে যুবলীগের 'যুব সমাবেশে' আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, "১৮ তারিখে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গোপনে রাজধানীতে ঢুকে পড়েছে। তারা আত্মীয়স্বজনের বাসায় উঠেছে। আর ফখরুল তাদেরকে অতিরিক্ত কাপড় আনতে বলেছে ক্ষমতা দখল করার জন্য।"
তিনি বলেন, "যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ আমরাও প্রস্তুত। অবরোধ করলে, বিএনপি অবরোধ হয়ে যাবে, বিএনপিকে অবরোধ করা হবে।"
এদিকে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, "আন্দোলনের নামে বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঠেকাতে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।"
তিনি বলেন, "বিএনপি এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজধানীতে যেন কোনো রকম নাশকতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম না করতে পারে, সেজন্যই কেন্দ্রের নির্দেশনায় মহানগর আওয়ামী লীগ এই কর্মসূচি দিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, বিএনপি বুধবার রাজধানী অবরোধের কর্মসূচি দিতে পারে। এমনকি তারা রাজধানী অচল করে দেয়ারও প্রস্ততি নিয়েছে। যেটি আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো।"
এছাড়াও বিএনপির কর্মসূচী দেখে আওয়ামী লীগও কর্মসূচী ঘোষণা দেবে। যাতে করে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত কোনভাবেই রাজপথ দখলে নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি না করতে পারে, যোগ করেন মির্জা আজম।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি বলেন, "বিএনপির অবরোধের চেষ্টা ঠেকাতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্র লীগ ও কৃষক লীগ সহ দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার থেকেই প্রতিটি থানা এবং ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।"
তিনি বলেন, "নয়াপল্টনে বিএনপির কর্মসূচী থাকলেও সারা দেশ থেকে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেজন্য আমরা বসে নেই। রাজধানীর কারো জানমালের কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, সেজন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি।"
বুধবার আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকায় ১০ লাখের বেশী নেতা-কর্মীর অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। বিএনপি যদি কোনো ধরনের অপচেষ্টা করে, সেটি ঠেকানোর জন্য কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী দলের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের দাবীতে গত জুন মাস থেকে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। তার বিপরীতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের কর্মসূচী পালন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের আর বেশী দিন বাকি নেই। এজন্য এ মাসেই কঠোর কর্মসূচীর দিকে যেতে পারে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগও এসব কর্মসূচী মোকাবিলায় নানা কর্মসূচী দিচ্ছে।