ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে কক্সবাজারে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত, নেই বিদ্যুৎ-মোবাইল নেটওয়ার্ক
ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে অচল হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। নেই বিদ্যুৎ, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। একইসঙ্গে সড়ক-উপসড়কে গাছ উপড়ে বন্ধ যানবাহন চলাচল।
গতকাল দেয়াল ও গাছ চাপায় প্রাণ গেছে ৩ জনের। আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পরই ঘূর্ণিঝড় হামুন কক্সবাজারে আঘাত হানে। এতে উপড়ে যায় গাছপালা ও ঘরবাড়ি।
কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়, সদর হাসপাতাল সড়কেই উপড়ে পড়েছে ১৫টির বেশি গাছ। একইসঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে বৈদ্যুতিক তার। ফলে বন্ধ আছে যানবাহন চলাচল। নেই বিদ্যুৎ।
শুধু এই সড়কই নয়; কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে উপড়ে পড়েছে বিশাল আকৃতির গাছ। বৈদ্যুতিক খুঁটিও উপড়ে পড়েছে সড়কে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। জেলা শহর ছাড়াও উপজেলাগুলোতে সড়ক-উপসড়কে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্ক না থাকায় কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করার কাজ চলছে।
চকরিয়ায় বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বখতিয়ার উদ্দিন রুবেল জানিয়েছেন, বাতাসের তাণ্ডবে উপকূলীয় ইউনিয়নের অন্তত ২ শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে। একজনের মৃত্যু ছাড়াও আহত হয়েছে ২০ জনের বেশি।
তিনি জানান, ধারণার অনেক আগেই আঘাত এনেছে হামুন। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এছাড়াও পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, ডেমুশিয়া, ও কোনাখালী ইউনিয়নে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় ঘরের টিন, গাছ ডালপালা উড়ে পড়ে অন্তত ১০ জন লোক আহত হয় বলে স্থানীয় লোকজন জানায়।
মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট শেখ কামাল জানিয়েছেন, মহেশখালীর কুতুবজোম, হোয়ানক, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া ইউনিয়ন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ঘর, গাছ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। ধলঘাটার কিছু এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছিল। পরে নেমে গেছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধান সড়ক ও উপসড়কে গাছ ভেঙে পড়ে অনেক অংশ এখনও বন্ধ। তা সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। পৌরসভায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভেঙে গেছে আড়াই শতাধিক ঘর। সমিতিপাড়া, ফদনার ডেইল, নাজিরারটেক এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানতে কাজ চলছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় জানতে বিলম্ব হচ্ছে।
চকরিয়া ও পেকুয়ায় ৫ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত
চকরিয়া ও পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে এক ঘণ্টার দমকা হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুই উপজেলায় ২৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অন্তত ৫ শত কাঁচা বসতঘর কমবেশি ভেঙেছে।
একাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গিয়ে ও গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে দুই উপজেলা। ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বেশিরভাগ এলাকায় একেবারেই নেই। সড়কের উপর উপড়ে পড়া গাছ পড়ে থাকায় অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি সচল হয়নি।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, চকরিয়া-পেকুয়ায় পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে। চালু করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
এছাড় ধান ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।
পহরচাঁদা ফাজিল মাদ্রাসাসহ বেশ ক'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও অত্যধিক ক্ষতি হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, "রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার দমকা হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ক্ষতি বিবরণ লিখিত দিতে। সরকারী অফিসারদের নিয়ে গঠিত একাধিক টিমও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে কাজ করছে।"