বাড়ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগী, কোম্পানিগুলোকে বেবি স্যালাইন উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশ
শীতের শুরুতে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় স্যালাইন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ডেক্সট্রোজ-এন স্যালাইন (ডিএনএস) উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছিলো। সে কারণে শীতের শুরুতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে বেবি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট নিরসনে স্যালাইন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোতে বেবি স্যালাইন উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে রোববার চিঠি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)।
নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে রাজশাহীতে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০০ রোগী ভর্তি থাকছে। হাসপাতালের ২২ বেডের নিউমোনিয়া ইউনিটে বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে ৯০ জন শিশু।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, "স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন তিনগুণ বেশি শিশু রোগী ভর্তি আছে। শিশুদের নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়রিয়া অনেক বেড়েছে। আমাদের ৫টি শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।"
''তবে স্যালাইনের সংকট হচ্ছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য এপিএন স্যালাইনের ৫০০ এমএল, ১০০০ এমএল, ডিএনএস-১০ প্রয়োজন হয়। আমাদের স্টকে এই স্যালাইনের ঘাটতি রয়েছে।"
"এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির কাছে স্যালাইনের চাহিদা জানিয়ে চিঠি দিয়েছি আমরা", বলেন তিনি।
ডিজিডিএর উপ-পরিচালক এবং মুখপাত্র নুরুল আলম বলেন, "গত কয়েক মাস দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় স্যালাইন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ডিএনএস স্যালাইন উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছিলো। এতে বেবি স্যালাইন উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। সে কারণে হঠাৎ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া বাড়াতে সংকট দেখা দেখা দিয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "বেবি স্যালাইন সংকট নিরসনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বৈঠক হয়েছে। সেখানে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত বেবি স্যালাইন উৎপাদনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে রাজশাহী বিভাগে স্যালাইন সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দুই-তিন দিনের মধ্যে বেবি স্যালাইনের সংকট কেটে যাবে।"
ওষুধ প্রশাসনের তথ্য বলছে, দেশে একমি ল্যাবরেটরীজ লি. পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লি., বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ওরিয়ন ইনফিউশন লি., অপসোনিন ফার্মা, লিবরা ফার্মাসিউটিক্যালস লি. মিলে দৈনিক ১ লাখ ৯০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করতে পারে। গত ১৫ দিনে শুধু রাজশাহীতে ২ লাখ ২২ হাজার ৯৩৮ ব্যাগ স্যালাইন ওষুধ প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এর থেকে কয়েকগুণ বেশি স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে রাজশাহী জেলায়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা। এক সপ্তাহ আগে শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলো ৩০ জন ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলো ৫ জন। এর পর থেকে প্রতিদিন নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯ তারিখ হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৫৯ জন ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ১০ জন। হাসপাতালটিতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ৫ শিশু আইসিইউতে ভর্তি আছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস, ডায়রিয়ার রোগীর চাপ তিনগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নিউমোনিয়া রোগী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ নিউমোনিয়া প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার তাৎপর্য তুলে ধরেন, কারণ অন্যান্য সংক্রমণের মতোই এটিও একটি ভাইরাল সংক্রমণ।
তিনি মা-বাবাকে শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা এবং জ্বরের মাত্রা মনিটরের পরামর্শ দিয়েছেন; পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০০ শিশু হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে। নভেম্বরের ১৯ দিনে বরিশালে ৯২৬৭, রাজশাহীতে ৬৭৯৫, ঢাকায় ৪৩৫৮, খুলনায় ৪২৪৪, রংপুর বিভাগে ২৩৯৫, সিলেটে ২২৫০, বরিশালে ২০২৪ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮১২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।