ইঞ্জিন সংকটে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে সহসা চালু হচ্ছে না ট্রেন
আসন্ন পহেলা ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জন্য আলাদা কোনো ট্রেন চালু হচ্ছে না। ফলে এই রুটে চট্টগ্রামের যাত্রীদের আপাতত সীমিত পরিষেবা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইঞ্জিন সংকটের কারণে এ বছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর সমাধান হিসেবে ঢাকা-কক্সবাজারগামী ট্রেনে চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য দুটি বগি বরাদ্দ থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটের নতুন ট্রেনে মোট ১৬টি কোচে আসন আছে ৭৮০টি। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১৫টি আসন।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেল সংযোগ উদ্বোধনের সময় ডিসেম্বর থেকে দুটি ট্রেন চালুর নির্দেশ দেন।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে পরিকল্পনা ছিল চট্টলা এক্সপ্রেসের ১২টি কোচ সম্বলিত রেক দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন পরিচালনা করার। এতে আসন থাকার কথা ছিল প্রায় ৬০০-৭০০টি। ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোট ৯টি স্টেশনে থামবে।
এ লক্ষ্যে চট্টলা এক্সপ্রেসের রেকটি প্রস্তুত করা হলেও শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিন না পেয়ে তা থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। এ বছর আর চালু হওয়ার সম্ভবনা নেই বলে জানান তারা।
গত ২১ নভেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ট্রেনটির অনুমোদন দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। বিরতিহীন ট্রেনটির টিকিট শুধু ঢাকা থেকে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সমালোচনার মুখে পরদিন ২২ নভেম্বর চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য দুটি কোচ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ইঞ্জিন সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "সংকট কাটিয়ে উঠতে আরও তিন বছর সময় লাগতে পারে। একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তিন বছর পর ২০টি ইনক্রিমেন্টে মোট ৮০টি ইঞ্জিন আসবে।"
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ১৮,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে। প্রকল্পটির অধীনে ৯টি নতুন স্টেশন নির্মাণ কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম উপেক্ষিত
এদিকে, চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য কক্সবাজার এক্সপ্রেসে দুটি কোচ রাখা হলেও তা একেবারেই অসময়ে বলে মনে করছে নাগরিক সমাজ।
ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে কক্সবাজারমুখী ট্রেনটি রাত সাড়ে ১০টায় ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। অর্থাৎ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের ট্রেন ধরতে হলে এই অসময়ে স্টেশনে আসতে হবে যাত্রীদের।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আকতার কবির চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "রাত ৩টা ৪০ মিনিটে ট্রেন দেওয়া তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। চট্টগ্রাম সবসময় উপেক্ষিত। এ ঘটনায় তা আবারও প্রমাণ হলো।"
কক্সবাজারে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত শিহাব জিশান প্রতি সপ্তাহে নিজ বাসা চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করেন। টিবিএসকে তিনি বলেন, "ভোর ৩টা ৪০ মিনিটে আমাকে ট্রেন ধরতে হলে রাতে না ঘুমিয়ে গভীর রাতে বাসা থেকে বের হতে হবে। এখানে যাত্রীদের কথা কোনোভাবেই বিবেচনা করা হয়নি।"
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই রুট নিয়ে মানুষের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার মানুষ কক্সবাজারে যাতায়াত করে। ১০ হাজার মানুষও যদি ট্রেনে ওঠেন, তবে এটি হবে সবচেয়ে লাভজনক রুট।
অথচ ঢাকা-নোয়াখালী এবং ঢাকা-সিলেট রুটে পর্যাপ্ত ট্রেন থাকার পরেও শীঘ্রই এই রুটে চালু হতে যাচ্ছে আরও এক জোড়া করে নতুন ট্রেন।
এসব রুটের পরিবর্তে আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হলে রেলের লাভ এবং মানুষের উপকার দুটোই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ইঞ্জিন
রেলওয়ের পরিবহন ও যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, পূর্বাঞ্চলের বন্ধ থাকা অর্ধশতাধিক ট্রেনসহ মোট ২০০ ট্রেন পরিচালনায় ৩০০টি ইঞ্জিন প্রয়োজন।
কিন্তু বর্তমানে আছে ১৫৬টি ইঞ্জিন। এরমধ্যে আবার ১০০টি ইঞ্জিনও সচল নেই। তবে বর্তমানে ১১৬টি চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে, রেলের দুই অঞ্চলের লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব লোকোমাস্টার (এসএলএম) পদের সংখ্যা ২,২৩৬টি। বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮৫০ জন, যা ট্রেন চালানোর কাজে নিয়োজিত জনবলের চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৩৮ শতাংশ।