নির্বাচনী প্রচারণা: চারদিকে শুধু নৌকা আর নৌকা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/12/20/p5_img-20231219-wa0085_0_0.jpg)
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এরইমধ্যে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাটে।
মোহাম্মদপুর এলাকার অলিগলিতে হাঁটলেই চোখে পড়ছে চারদিকে ঝুলিয়ে রাখা সাদাকালো পোস্টার। আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণা যে শুরু হয়ে গেছে, তা মোহাম্মদপুরের এই অলিগলির রাস্তার সাজসজ্জাতেই বোঝা যাচ্ছে। তবে সকল পোস্টারই আওয়ামী লীগ মনোনীত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের নৌকার পোস্টার। অন্যকোনো পোস্টার চোখে পড়ে না এ এলাকায়।
মগবাজার এলাকায় ঘুরেও মাথার ওপরে ঝুলতে দেখা গেছে শুধু নৌকারই পোস্টার। সংসদীয় আসন ঢাকা-১২ থেকে নৌকার প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পোস্টারেই ছেয়ে গেছে তার সংসদীয় আসন।
শুধু রাজধানীর এই দুই এলাকাই নয়– ঢাকাসহ সারাদেশের প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পরই ঝুলিয়েছেন তাদের পোস্টার। নৌকার পোস্টারে সারাদেশ ছেয়ে গেলেও অন্য দলের কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোস্টার ও প্রচারণা তেমনটি চোখে পড়েনি।
চট্টগ্রাম-৭ সংসদীয় আসনের (রাঙ্গুনিয়া) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের এলাকা ইছাখালীর রাঙ্গুনিয়াও সেজেছে নৌকার পোস্টারে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রচারে নেমেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল না থাকায় নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য কারও কার্যক্রম চোখে পড়ছে না খুব একটা।
বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টিসহ ৪টি দলের আসন সমঝোতার পরে বাকি ২২টি দলের প্রার্থীরা এক প্রকার আনুষ্ঠানিতার জন্যই নির্বাচনে আছেন– এমনটিই বলছেন বেশ কয়েকটি দলের নেতারা। তাই অন্য দলগুলোর দাবি– 'নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেখানে জয় নিশ্চিত, সেখানে আমরা এতো খরচ করে প্রচারণা করতে চাই না'।
কিছু কিছু প্রার্থী আগামী ১-২ দিনে প্রচারণা ও পোস্টার ঝোলাবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা মানেই নির্বাচন উৎসবমুখর হওয়া। নৌকার প্রচারণায় তারা পোস্টারিংসহ জনসভা করতে সবার থেকে এগিয়ে থাকতে চান।
ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারণা
মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে অন্তত ১০টি আসনের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অধিকাংশ অলিগলিতে নৌকার প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকরা তাদের এলাকার মানুষদের কাছে হ্যান্ডবিল, লিফলেট বিতরণ করছেন।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা থাকায় ঢাকার প্রায় সকল প্রার্থীই শোভাযাত্রা বের করেন এবং পাশাপাশি নৌকার প্রচারণাও চালান।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/12/20/electoral_posters_0.jpg)
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া আওয়ামী নেতাকর্মীরা পিকআপ, ট্রাক, গাড়ি, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অংশ নেন। একইসঙ্গে উচ্চশব্দে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে বিভিন্ন গানের মাধ্যমে নৌকার প্রচারণা চালান। এমনকি, হাতির পিঠে চড়েও নৌকার প্রচারণা চালিয়েছেন কেউ কেউ।
এতে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটনার পাশপাশি উচ্চশব্দে প্রচারণা চালানোয় শব্দ দূষণের পরিস্থিতিও তৈরি হয়।
ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল সোমবার থেকেই নৌকার প্রচারণা শুরু করেছেন।
মিরপুরের শাহ আলী মাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি। সেখানে সমাবেশ করে সোমবার সন্ধ্যায় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীদের নিয়ে মূল সড়কে নেমে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তারা নৌকার সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। মাইনুল হোসেন নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাজার গেট থেকে গাবতলী অভিমুখী সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
তার নির্বাচনী এলাকার অলিগলিতে নৌকারই পোস্টার ব্যানার দেখা গেছে। অন্য কোনো দলের প্রার্থীর পোস্টার কিংবা প্রচারণা সেখানে দেখা যায়নি। যদিও এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও বিভিন্ন দলের ও স্বতন্ত্র আরও ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
ঢাকা-৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাঈদ খোকন মঙ্গলবার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে পুরান ঢাকাসহ তার নির্বাচনী এলাকায় শোভাযাত্রা করেন। এসময় তাকে হাতির পিঠে চড়েও সড়ক প্রদক্ষিণ করতে দেখা গেছে।
এ সময় নেতাকর্মীরা দলীয় স্লোগান দেন ও নৌকা প্রতীকে ভোট চান। শোভাযাত্রার সময় সাঈদ খোকনও নৌকায় ভোট এবং দোয়া চেয়ে জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন।
ধোলাইখাল এলাকায় সাইদ খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, "ঢাকাবাসী আমার সঙ্গে আছেন। আশা করি, ঢাকা-৬ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হতে পারবো। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ এবং নগরবাসীর কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই।"
ঢাকা-৮ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায় শুধু নৌকার পোস্টারেই ছেয়ে আছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। রিকশায় করে মাইক বাজিয়ে চাওয়া হচ্ছে ভোট।
যদিও তাদের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার মতো বিরোধী দল নেই এখানে; এরপরেও তারা জোরেসোরে চালিয়ে যাচ্ছেন নৌকার প্রচারণা।
ঢাকা-৮ আসনের ফকিরাপুল এলাকার প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, "ভোট চাওয়ারতো প্রয়োজন নেই। এমনিতেই জয়ী হবেন নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তার বিপক্ষে কে দাঁড়িয়েছে তাকে তো চিনিই না।"
এদিকে ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাকে ট্রাকে নৌকা তুলে আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা অংশ নিতে দেখা যায়।
শোভাযাত্রা শেষে দুপুরে খামারড়বাড়ি এলাকা থেকে আগারগাঁওয়ের দিয়ে প্রায় ১০টি ট্রাকে করে কর্মীদের নৌকায় ভোট চাইতে চাইতে চলে যেতে দেখা যায়। প্রতিটি ট্রাকেই নৌকা প্রতীকের ভোট চেয়ে ব্যানার লাগানো ছিল। মাইক বাজিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়া হচ্ছিল।
তবে নৌকা ব্যতীত ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরেই তার নির্বাচনী এলাকায় লাঙলের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা শুরু করেন।
মিছিলে লাঙল, বাদ্যযন্ত্র, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে লাঙল মার্কায় ভোট চেয়ে শ্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী মিছিলটি জুরাইন পোস্তগোলা হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কদমতলী শিল্পাঞ্চলে এসে শেষ হয়।
এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বাবলা বলেন, "আমি এই এলাকায় যত উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, আমি বিশ্বাস করি জনগণ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে এ আসনে লাঙল বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।"
তবে তার নির্বাচনী এলাকায় লাঙ্গলের পোস্টার দেখা যায়নি।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/12/20/img-20231219-wa0032_0.jpg)
আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রত্যাহার করে নেওয়া ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী শেরীফা কাদের মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দক্ষিণখানের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।
তিনি উত্তরখানে মাজার জিয়ারত করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
ঢাকার বাইরেও শুধুই নৌকার প্রচারণা
সোমবার চট্টগ্রাম-৭ সংসদীয় আসনে (রাঙ্গুনিয়া) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ডিঙি নৌকায় কর্ণফুলী নদী পার হয়ে ইছাখালীর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে সাইকেল চালিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রাঃ) ও হযরত শাহ পরাণ (রাঃ) এর মাজার শরিফ জিয়ারত করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের তুলাবান নবরত্ন বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় উপাসনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন পার্বত্য রাঙামাটি আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দীপংকর তালুকদার।
বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ স্কুল জীবনের বিদ্যাপীঠ থেকেই শুরু করেন নির্বাচনী প্রচারণা।
রাজশাহীতে এককভাবে মাঠে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণায় থেমে নেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। তবে সেখানে অন্য দলের প্রার্থীদের ঠিক সেভাবে প্রচার-প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি, অন্য প্রার্থীদের পোস্টারও সেভাবে টানাতে দেখা যায়নি।
রাজশাহী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী তার ট্রাক মার্কা প্রতীক নিয়ে কাঁকনহাটের পাকড়ি ইউনিয়নে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে অংশ নেন।
রাজশাহীর ছয়টি আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। তারা এখনো প্রচার-প্রচারণা শুরু করেনি।
রাজশাহী সদর আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, "আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিইনি। আমাদের মধ্যে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। আমরা সব প্রার্থীদের বৈঠক করার জন্য ডেকেছি, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।"
খুলনার ৬টি আসনে এবার ৩৫ জন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগের সতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রচারে নেমেছেন। তবে অন্যান্য দলের প্রার্থীদের তেমন মাঠে দেখা যায় নি।
মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার নির্বাচনী এলাকা আখাউড়ায় লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামেন।
আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, দুই মেয়াদে এমপি থাকাকালে কসবা-আখাউড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এবার বিজয়ী হলে উন্নয়নের সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। এজন্য নৌকা প্রতীকে তিনি ভোট।
এদিকে, বগুড়ায় প্রচার-প্রচারণায় গতি কম; মাঠে রয়েছেন দুএকজন প্রার্থী।
সব প্রার্থী প্রচারণার মাঠে থাকলেও কুমিল্লার দুই মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তাজুল ইসলামকে প্রচারণার মাঠে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় অনেকটা নির্ভার এ দুই মন্ত্রীর এলাকায় প্রচারণায় নেমেছেন তাদের কর্মী-স্বজনরা।