টেলিটক ই-সিমের যাত্রা শুরু; শীঘ্রই আসছে অপারেটরদের অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ার ব্যবস্থা
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যাত্রা শুরু করল দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি টেলিটকের ই-সিম সেবা। এছাড়া এদিন দেশে প্রথমবারের জন্য অপারেটরদের মধ্যে অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ার ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি ভবনে টেলিটকের ই-সিম সেবাটি উদ্বোধন করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। সেখানেই তিনি অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেওয়ার শিগগিরই চালুর কথা জানান।
অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ার সিস্টেমে একটি অপারেটরের যদি কোনো স্থানে টাওয়ার না থাকে, তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) ধার্যকৃত একটি নির্দিষ্ট চার্জ পরিশোধ করে অন্য আরেকটি অপারেটরের, যার টাওয়ার চালু আছে, নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রাহককে নেটওয়ার্ক সেবা দিতে পারবে।
অনুষ্ঠানে পলক বলেন, ই-সিম পরিবেশবান্ধব। এটি ফিজিক্যাল সিম কার্ডের মতো নয়। এটি ফোনে ইনস্টল করা ভার্চুয়াল সিম, যেটি কোনো মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে তৃতীয়পক্ষীয় সফটওয়্যারের সহায়তায় মোবাইল নম্বর বরাদ্দপূর্বক অনলাইনে সক্রিয় করা হয়। ই-সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বারবার খোলার ঝামেলাই যেহেতু নেই, তাই এ সিম নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা নেই। এছাড়া একইসঙ্গে একাধিক নম্বর ব্যবহার করা যায়। ব্র্যান্ডভেদে একসঙ্গে এক ফোনে পাঁচটি পর্যন্ত ই-সিম ব্যবহার করা যায়।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, 'টেলিটকের সেবার মান বাড়াতে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে বাংলালিংকের যে নেটওয়ার্ক আছে, সেই অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ার করার প্রস্তাব দিয়েছি। টেলিটক, বাংলালিংক ও বিটিআরসির প্রযুক্তিবিদরা এটি টেস্ট করেছেন, এতে তারা সফল হয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'ই-সিম আমরা উদ্বোধন করলাম। অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ারও টেলিটকের ব্যবহারকারীদের অল্পদিনের মধ্যে উপহার দিতে পারব। এটি হলে টেলিটকের নেটওয়ার্ক না থাকলেও বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক থাকলেই হবে। এর জন্য একটি চার্জ বিটিআরসি নির্ধারণ করে দেবে।'
এছাড়াও ভাষা শহিদদের স্মরণে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তিনটি বাংলা সফটওয়্যার—উচ্চারণ (বাংলা টেক্সট টু স্পিচ), কথা (বাংলা স্পিচ টু টেক্সট) ও বর্ণ (বাংলা ওসিআর)—এবং একটি বাংলা ফন্ট—পূর্ণ—উদ্বোধন করা হয়েছে।
সফটওয়্যারগুলো সম্পর্কে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উচ্চারণ হচ্ছে বাংলা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার, যা কম্পিউটারে বা ওয়েবসাইটের লেখা উচ্চারণ করে পড়ে দেয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বাংলা লেখা পড়ার জন্য সফটওয়্যার। এটি পাওয়া যাবে www.voice.bangla.gov.bd ওয়েব অ্যাড্রেসে।
কথা হচ্ছে কম্পিউটারে বাংলায় কথা বললে লেখায় রূপান্তিত হওয়া ও রেকর্ডেড অডিও ট্রানস্ক্রিপশনের সফটওয়্যার। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি ভয়েস টাইপিং ও সাবটাইটেল তৈরির জন্য শক্তিশালী অ্যাপ্লিকেশন। এটি ব্যবহারের ওয়েব অ্যাড্রেস www.read.bangla.gov.bd।
বর্ণ হচ্ছে ছবি থেকে লেখায় রূপান্তরের (ওসিআর) সফটওয়্যার। www.ocr.bangla.gov.bd—এই ওয়েবসাইট থেকে বর্ণ ব্যবহার ও ডাউনলোড করা যাবে।
আরও জানানো হয়, পূর্ণ ফন্ট একটি অনন্যসাধারণ বাংলা ইউনিকোড ফন্ট, যা ফন্ট-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর ডিজাইন ও ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা প্রকাশনায় প্রয়োজনীয় সব টাইপোগ্রাফিক ফিচার। একইসঙ্গে বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্যকেও যথাযথভাবে প্রকাশ করছে এই ফন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার ছাড়াও এই ফন্ট মুদ্রণ কাজে এবং ওয়েবে ব্যবহারোপযোগী। ফন্টটি bangla.gov.bd ঠিকানা থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের গবেষক ও উদ্ভাবকরাই এসব প্রযুক্তিসেবা তৈরি করেছেন। তারা নিজেদের নকশায় ১৬ ধরনের কম্পোনেন্ট ও ৪০ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করেছেন।
পাশাপাশি এদিন বিটিসিএলের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট জিপনের দুইটি সাশ্রয়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ—সুলভ ও ভাষা—চালুর ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী।