ঈদে প্রত্যাশিত যাত্রী নেই লঞ্চে
রোববার (৭ এপ্রিল) পরিবার নিয়ে লঞ্চে করে বরিশাল যাওয়ার জন্য বিকেলেই সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন মৌসুমী ইসলাম। যদিও লঞ্চ ছাড়বে রাত আটটার পর, তিনি বিকাল ৫টার সময়ই তার বনশ্রীর বাসা থেকে বের হন। ধারণা করেছিলেন, রাস্তায় জ্যাম ও লঞ্চে ভিড় হতে পারে। এতে তার বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি ও বাচ্চাদের নিয়ে উঠতে সমস্যা হবে। তাই সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম পেলেও, সদরঘাটে কোনো ভিড় পাননি মৌসুমী। অল্প সংখ্যক যাত্রী ছিল পন্টুনে।
"আমি সত্যি অবাক হয়েছি। গতবছরও আমরা ২৭ রোজায় বাড়ি যাই। সেসময় ঘাটে ও লঞ্চে ভিড় ছিল। আমাদের বেশ কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘাটে ঢোকার টিকেট নিতে হয়। তবে এবার এসেই টিকেট পেয়ে গেলাম," বললেন মৌসুমী।
পদ্মা সেতুর চালুর আগে ঈদের সময় লঞ্চগুলোতে উপচে পড়া ভিড়, ঘাটে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল, টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ি, বসা নিয়ে যাত্রীদের মারামারি— এমনটাই ছিল রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৃশ্য।
পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই লঞ্চে যাত্রী কমে যায়। তারপরও সড়কে নানান ভোগান্তি ও যানজটের কারণে ঈদে মোটামুটি যাত্রীর দেখা পাচ্ছিল দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী নদী পথের যানগুলো। গত বছর ঈদেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু এবছর যাত্রী নেই।
২০ রমজান থেকে লঞ্চগুলো অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করলেও যাত্রীদের সাড়া মেলেনি তেমন।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইডব্লিউপিসিএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, "এক সময় ঈদে আমাদের ব্যস্ততা থাকতো। এত যাত্রী হত যে সবাইকে টিকেট দিতে পারতাম না। সময়ের আগে লঞ্চ ছেড়ে দিতে হত। কিন্তু সেতু চালু হওয়ার পর এখন আমাদের যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু যাত্রী পাই না।"
"তবে সেতু চালুর পরও গতবছর ঈদে আমরা ভাল যাত্রী পেয়েছি। কিন্তু এবছর ঈদে যাত্রী একেবারেই কম," যোগ করেন তিনি।
বাদল আরও বলেন, ঈদের কারণে স্বাভাবিক সময়ের থেকে লঞ্চে কিছু যাত্রী বেড়েছে। তবে সেটা গতবারের থেকে অনেক কম। গতকাল ঢাকা সদরঘাট থেকে ৫টি লঞ্চ বরিশাল গিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে আগে দুটো করে চলত। আর গত ঈদে এমন সময় ৭-১০টি করে চলেছে।
তিনি বলেন, "অগ্রিম টিকেট তেমন বিক্রি হয়নি। আমরা আশায় ছিলাম গার্মেন্টস ছুটি হলে লঞ্চে যাত্রী কিছুটা বাড়বে। তবে সেটি নিয়েও এখন সন্দিহান।"
ঈদযাত্রায় লঞ্চের চাহিদা কমে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির।
কেন লঞ্চ তার আবেদন হারাচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "কেন মানুষ লঞ্চঘাটে আসবে? পল্টন থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩/৪ কিলোমিটার রাস্তা আসতে জ্যামের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে। সেই সময়ে মানুষ সড়কে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখন বাস ছাড়ে। ফলে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জার্নি করে লঞ্চঘাট না এসে, বাসে করে চলে যায়।"
"এছাড়া, সড়ক পথ এখন অনেক ভাল হয়েছে। আগেরমত ঝক্কি-ঝামেলা এখন নেই। সময়ও কম লাগে। এজন্যই লোকজন লঞ্চে যাচ্ছে না," যোগ করেন তিনি।
আলমগীর কবির বলেন, "এখন আর হকারও নেই আগের মতো। আগে কোনোভাবে হকার সরানো যেত না। কিন্তু যাত্রী নেই তাই বেচাকেনা কম হওয়ায় টার্মিনাল থেকে অনেক হকার চলে গেছে। এখন যারা আছেন, তারা কোনোভাবে এক পাশে বসে পণ্য বিক্রি করছেন। যারা এখানে কুলি-মজুর আছে, ওদেরতো আরও খারাপ অবস্থা। ওদের তো আয় নেই বললেই চলে।"
যাত্রীর চাপ বেড়েছে বাস ও রেলে
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলযাত্রার পঞ্চম দিন রোববারে গত চার দিনের তুলনায় কমলাপুর রেল স্টেশনে যাত্রীর চাপ বেশ বেড়েছে। তবে চাপ বাড়লেও এদিনও ট্রেনের শিডিউলে উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা হয়নি।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, "সকাল থেকে আজ যাত্রীর চাপ বেশি। তবে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতির কারণে সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্য রয়েছে। সকাল থেকে ট্রেনও প্রায় সময় মতোই স্টেশন ছেড়ে গেছে।"
এদিকে বিগত কয়েকদিনের তুলনায় রোববার যাত্রী বেড়েছে টার্মিনালগুলোতে। সবচেয়ে বেশি যাত্রী ছিল সায়েদাবাদে। এদিন সড়কে যানবাহন বেড়েছে, তবে যানজটের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়ক ও মহাসড়কে দূরপাল্লার গাড়িগুলো যেতে-আসতে তেমন যানজটের সম্মুখীন না হলেও সড়কে ধীরগতি এবং পদ্মা সেতুতে কিছুটা চাপ ছিল।