১৫ বছরের মধ্যে যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়ায় রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়াও এটি দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এর আগে ২০০৯ সালে যশোরে সর্বোচ্চ ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছিল। আর ১৯৭২ সালের ১৫ মে সর্বোচ্চ ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে।
খুলনা বিভাগীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহ ধরেই যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় যশোরে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর যশোরে ছিল ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন রবিবার যশোরে ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া দপ্তর যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। আর খুলনায় ৪১.৫ ডিগ্রি, মংলায় ৪২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল ২৮ শতাংশ।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল যশোরের জনজীবন। শহরে দিনে লোকজনের উপস্থিতি কমে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ মুজিব সড়ক, দড়াটানা মোড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক তীব্র দাবদাহে প্রায় জনশূন্য দেখা গেছে। মানুষের উপস্থিতি যেমন কম, তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও কম। কিছু ইজিবাইক, রিকশা দেখা গেলেও যাত্রীর অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে চালকদের।
শহরের সিভিল কোর্ট মোড়ে ইজিবাইক রেখে যাত্রীর অপেক্ষায় বসেছিলেন চালক রফিকুল মণ্ডল । তিনি বলেন, 'সকালে ৭টার দিকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। ৯টা পর্যন্ত মোটামুটি ভাড়া টেনেছি। তারপর থেকে আর ভাড়া হয় না। রাস্তায় লোকজনই নেই বললেই চলে।'
রিকশাচালক হাফিজুর রহমান বলেন, 'বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। এতো গরমে মানুষ বের হবে কি করে? আমরা পেটের দায়ে বের হয়েছি, যাত্রী পাচ্ছি না। ভাড়ার রিকশা চালাই, মহাজনকে দেওয়ার মতো টাকাও এখনো হয়নি।'
যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার রিকশাচালক জাফর আলী বলেন, 'প্রচণ্ড গরমে গায়ে যেন আগুনের ধাক্কা লাগছে। একটু রিকশা চালালেই ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। মাথা ঘুরে উঠছে। কিন্তু রিকশা না চালালে তো সংসার চলবে না।'
এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে পানি সংকটে পড়েছে শহরের বাসিন্দারা।
শহরের বকচর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, প্রায় একমাস ধরে চাপকলে পানি উঠছে না। সাবমার্সিবলে বাসার ছাদের রিজার্ভ ট্যাংকে পানি তুললেই তা গরম হয়ে যাচ্ছে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত পানিতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, 'টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যা উঠছে তাতে আয়রন থাকছে। এ পানি পান করা যাচ্ছে না।