শেষ মুহূর্তে গাজীপুরের দুই মহাসড়কে বাড়তি চাপ, যানবাহন সংকটে ভোগান্তি
ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র একদিন। তাই শেষ সময়ে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে গাজীপুরের দুই মহাসড়কের বাস স্টেশনগুলোতে। গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
গেল তিনদিনে গাজীপুরের অধিকাংশ পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে আজ শনিবারই (১৫ জুন) বেশিরভাগ (প্রায় ৬০ ভাগ) পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। একারণে শনিবার বিকেলে দুই মহাসড়কে যাত্রীর চাপ অনেক বেড়েছে। কিন্তু, যাত্রীর তুলনায় যানবাহন খুবই অপ্রতুল। ফলে এ সুযোগে অনেক যানবাহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও করছেন ঈদযাত্রীরা।
চন্দ্রায় বাসের জন্য প্রায় ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, "গত শুক্রবার কারখানা ছুটি হওয়ার পর প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে বিকল্প যানবাহনে বাড়ি যাব।"
অপর যাত্রী নওগাঁর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "সড়কে প্রচুর গাড়ি আছে, কিন্তু গাড়িতে সিট নাই।"
এদিকে মহাসড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে। প্রশাসন যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ বলেন, "গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন কারখানা ছুটি শুরু হয়েছে। শনিবার গাজীপুরের প্রায় ৬০ ভাগ কারখানা ছুটি হয়েছে। একারণে সড়কে বিকেলের দিকে একটু বেশী চাপ তৈরী হয়েছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে চাপ কমে যাবে।"
তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি, কোন কারখানায় যেন বেতন নিয়ে ঝামেলা না হয়। এ বছর বেতন নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও– এগুলো সমাধান করা হয়েছে। আশা করা যায়, সকলের ঈদ সুন্দর হবে।
পুলিশ ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গগামী প্রায় সব যানবাহন যাত্রীপূর্ণ করে ঢাকা থেকে যাত্রা করে। এ কারণে যানবাহন থাকলেও– কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় বাসষ্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা বাসে উঠার সুযোগ পান না। তারা সড়কে অপেক্ষা করতে করতে একপর্যায়ে সড়কের মাঝখানে চলে আসে। এতে যানবাহনের চলাচলের জায়গা কমে যায়, আবার অনেক বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার জন্যও গতি কম করে। এসব কারণে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহনের গতি ধীর রয়েছে।
টঙ্গী থেকে আশুলিয়া হয়ে উত্তরবঙ্গগামী গাড়ি, সাভারের দিক থেকে আসা গাড়ি ও গাজীপুর থেকে আসা গাড়ি একসাথে চন্দ্রা মোড় অতিক্রম করায় সড়কে যানবাহনের গতি কমে যায়। এতে চাপ বেড়ে যায়।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে দুই মহাসড়কের বাস স্টেশনগুলোতে যানবাহন ও যাত্রীদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বিকালে যাত্রীর চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে পায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যাত্রীর প্রচন্ড ভিড়। কিন্তু যানবাহন কম থাকায় স্টেশনগুলোতে অপেক্ষমাণ যাত্রী ও গাড়ির জটলা রয়েছে।
একারণে বাসস্টেশন এলাকাগুলোতে পরিবহনগুলো ধীর গতিতে চলছে। যাত্রীর বাড়তি ভাড়ার চাপ এবং যানবাহন স্বল্পতার কারণে অনেক বাসের কর্মীরা বেশি ভাড়া চাইছে। ঘরমুখো মানুষও দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ ভ্যান, খোলা ছাদের ট্রাক এবং টেম্পুসহ অন্যান্য বিকল্প যানবাহনে রওনা দিচ্ছেন।
ঢাকা-ময়মনিংহ মহাসড়কেও একই অবস্থা। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহনের স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের বাস পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পেলেও ভাড়া নিচ্ছে বেশি।
ময়মনসিংহের পোশাক কর্মী নাজমা বলেন, "বাড়িতে যেতে বাসে আগে দেড়শ টেহা লাগত, এহন তিনশ/চারশ টেহা কইরা একেক জনা।"
নেত্রকোনার জসিম বলেন, "৩/৪ ঘন্টা ধরে দাঁড়াইয়া আছি। গাড়ি পাইনা। ভাড়া বেশি চায়। সড়কে অনেক যাত্রী, আর জ্যাম।"
তবে পরিবহন কর্মীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
ময়মনসিংহগামী একটি বাসের চালক দাবি করেন, "আমরা ভাড়া বেশি নেই না। আগে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ভাড়া নিতাম ৩২০ টাকা। আর চৌরাস্তা থেকে ২শ টাকা। এখন ২শ টাকা নেই, আবার আসতে হইব খালি। যাত্রীদের জিগ্যেস করেন, আমরা ভাড়া বেশি নেই না।"
অপরদিকে, জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনেও যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ করা গেছে। বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসার সময়েই আসন পূর্ণ করে আসে। ফলে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ট্রেনের কোন যাত্রীই আসন পান না। ট্রেনের ভিতরে জায়গা না পেয়ে শত শত যাত্রী দায়িত্বরত রেলপুলিশ ও আসনার সদস্যদের লাঠির আঘাত সহ্য করে ও বাধা উপেক্ষা করে ট্রেনের ছাদে চড়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করেছেন। ট্রেনের ছাদেও একটু জায়গা খালি নেই।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, শনিবার অনেকগুলো কারখানা একযোগে ছুটি হওয়ায় বিকালে সড়কে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। অনেক স্থানে যাত্রীর তুলনায় যানবাহন কম ছিল। একারণে যাত্রীদের কোথাও কোথাও দীর্ঘসময় পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, " এসব কারণে কোথাও সাময়িক যানবাহনের গতি কম থাকলেও– কোথাও যানজট হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে মানুষ এবার স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবে।"
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: মাহবুব আলমও বলেন, "গাজীপুরের শিল্পকারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে চাপ বেড়েছে। তবে কোথাও কোনো যানজট নেই। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন আছে। যেকোন পরিস্থিতিতে যাতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, তার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।"