রেলপথে পণ্য ও তেল পরিবহন বিঘ্নিত, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের স্তূপ
রেলপথে যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অংশে আমদানিকৃতপণ্য ও তেল পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে; এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ঢাকা আইসিডিমুখী (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) কন্টেইনারের স্তূপ জমে গেছে বলে জানা গেছে।
একইভাবে, ঢাকা আইসিডি থেকেও নেওয়া যাচ্ছে না রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার। এতে আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনইার নামার পর তার প্রায় ৩ শতাংশ রেলপথে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে নেওয়া হয়। তবে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রেলযোগে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কন্টেইনারের স্তুপ জমার পাশাপাশি বন্দর থেকে ট্রেন যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে তেল পরিবহনও বন্ধ হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর, শিপিং এজেন্ট এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে ঢাকা আইসিডিগামী কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৮২৫ টিইইউ। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার প্রভাবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার কমলাপুর আইসিডিগামী ১,৫৯৬ টিইইউ আমদানি কন্টেইনার জমে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে। এই সময়ে ঢাকা আইসিডি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা যায়নি অন্তত ৫০০ টিইইউ রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার।
চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই)-এর প্রধান ইয়ার্ড মাস্টার আবদুল মালেক টিবিএসকে জানান, গত ১ আগস্ট থেকে রেলপথে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, "ওইদিন বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া কন্টেইনার ট্রেন ঢাকা আইসিডিতে গিয়েছে। ২ আগস্ট সিজিপিওয়াই থেকে একটি কন্টেইনার ট্রেন ছেড়ে গেছে। তবে এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি পণ্য পরিবহন।"
চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে সিজিপিওয়াই থেকে ৪টি কন্টেইনার ট্রেন ঢাকা আইসিডিতে যায়। এছাড়া, তেলবাহী অন্তত ৩টি ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, রংপুরে চলাচল করে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলযোগে প্রায় ১০০ টিইইউ আমদানি কন্টেইনার আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, রপ্তানি কন্টেইনার এসেছে প্রায় ৩০টি।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে কন্টেইনার পরিবহন হয়েছে ৮৮ হাজার ৫০৭ একক। সেই হিসাবে দিনে গড়ে কন্টেইনার পরিবহন হয়েছে ২৪৩ একক।
ডেলিভারি বিলম্বে ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলপথে কমলাপুর আইসিডিতে ইস্পাত পণ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন হয়। ডিপোতে নেওয়ার পর, সেখানে শুল্কায়ন করে ঢাকা আইসিডি কাস্টমস হাউস। এরপরই খালাস নেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য ডেলিভারি নিতে বিলম্বের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের শিপমেন্ট না দিতে পেরে এয়ার শিপমেন্টও করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, "চলমান এই সংকটের কারণে গত বৃহস্পতিবার আমাদের ১ লাখ ৫১ হাজার ডলারের পণ্য এয়ার শিপমেন্ট করতে হয়েছে। এতে ৭৫ হাজার ডলার খরচ হয়েছে। চলমান সংকটে ক্ষতি পরিমপের কোনো পরিসীমা নেই।"
তিনি বলেন, "বন্দরে যে জট সৃষ্টি হয়েছে তা কখন স্বাভাবিক হবে আমারা জানিনা। ঢাকা আইসিডি থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে না পারায় কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, আমদানি-রপ্তানিতে অদৃশ্য ক্ষতি তত বাড়ছে।"
এমন পরিস্থিতিতে বন্দর থেকে আইসিডিমুখী কন্টেইনার দ্রুত নিয়ে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক টিবিএসকে জানান, "রেলযোগে যেসব কন্টেইনার ঢাকা আইসিডিতে নেওয়া হবে, সেগুলো সড়ক পথে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এসব আমদানি চালানের শুল্কায়ন হবে ঢাকা আইসিডি কাস্টমসে।"
"চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আইসিডিমুখী কন্টেইনারের যে স্পেস আছে, সেটি পরিপূর্ণ হয়ে এখন ইয়ার্ডের অন্য স্থানে রাখতে হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি ঢাকা আইসিডিমুখী কন্টেইনার নিয়ে যাওয়ার জন্য," বলেন তিনি।
এদিকে, আমদানি পণ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের স্টোর রেন্ট (গুদাম ভাড়া) ৭ দিনের জন্য মওকুফ করে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়। গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব আমদানি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো হবে, সেসব পণ্যেই কেবল এই ছাড় পাওয়া যাবে।