সারাদেশে সহিংসতায় অন্তত ১১৯ জন নিহত, বাড়তে পারে সংখ্যা
কয়েক সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে ও পরেও মানুষ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১১টা ২৫ মিনিটে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সারাদেশে সংঘর্ষে অন্তত ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগে ও পরে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এসব সংঘর্ষের অনেকগুলোরই সূত্রপাত হয়েছে পুলিশ স্টেশনে হামলা থেকে। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক নিহতের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। পাঁচটি হাসপাতালে ৭১ জন নিহতের তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া লক্ষ্মীপুরে সোমবার সর্বোচ্চ ১১ জন নিহত হয়েছেন। জেলার তমিজ মার্কেট এলাকায় সাবেক যুবলীগ নেতা ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাড়ির সামনে থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে সোমবার বিকেলে বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত তিনজনের মরদেহ লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পৌঁছায়। আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
গাজীপুরে আজ বিকেলে আনসার একাডেমিতে হামলাকারীদের লক্ষ্য করে আনসার সদস্যদের গুলিতে অন্তত দুইজন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে আনসার ভিডিপি একাডেমিতে হামলা চালিয়ে দুটি প্রধান ফটক ও প্রবেশপথ ভাঙচুর করে। জবাবে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে অন্তত দুজন নিহত হন।
সফিপুর আধুনিক হাসপাতালের ডা. সাদ্দাম হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহীতে সংঘর্ষে একজন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়েছেন। নিহতের নাম সাকিব আঞ্জুম (২৭)। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর আলুপট্টি এলাকায় লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শঙ্কর কে. বিশ্বাস বলেন, 'হাসপাতালে প্রায় ৮০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
এদিকে হবিগঞ্জে সংঘর্ষে আরও ছয়জন নিহত হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ইউএনবি জানিয়েছে, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন হাসান (১২), আশরাফুল (১৭), মুজাক্কির (৪০), নয়ন (১৮), তোফাজ্জল (১৮) ও সাদিকুর (৩০)।
বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা ও বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পোড়া বাসা থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বিকেলে শতাধিক দুর্বৃত্ত বাড়িটি ঘেরাও করে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আগুনে মরদেহ তীব্রভাবে পুড়ে যাওয়ায় নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকতা মো. বশির উদ্দিন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার সময় সাদিক আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে জানা গেছে।
যশোরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের একটি হোটেলে আগুন দেওয়ার পর ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ বলেন, 'অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা ছয়টি মরদেহ পেয়েছি। আহত ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।'
কুষ্টিয়ায় ১৩ বছরের এক শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালাতে থাকা একদল লোকের ওপর পুলিশ গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।
এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দুপুর ১টার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি অংশ স্টেশনে হামলা চালায়।
পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও লাইভ বুলেট নিক্ষেপ করলেও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন ইউসুফ আলী (৭০), আবদুল্লাহ (১৩), বাবু (৪০) ও আশরাফ (৪২)।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সাতক্ষীরায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে অভিনেতা শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে জনতা।