রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাওয়া বিক্ষোভকারীদের সরাতে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ; আহত ৫
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে তার সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া ছররা গুলিতে চারজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতের এ বিক্ষোভের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে আরও একজন বিক্ষোভকারী আহত হন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল (২০), ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম সেলিম (৪৫), সাংবাদিক রাজু আহমেদ (২৫) ও ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮)।
আর সাউন্ড গ্রেনেডে আহত আরিফ খান (২০) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
'বঙ্গভবনের সামনে থেকে আহত অবস্থায় পাঁচজন এসেছেন। তাদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে,' বলেন তিনি।
ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, তারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধার মুখে পড়েন।
'ওখানে ছত্রভঙ্গ করার জন্য ছররা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় কয়েকটি গুলি [আমার] ডান পায়ের উরু ও বাম পায়ের গোড়ালিতে লাগে,' বলেন তিনি।
অপর গুলিবিদ্ধ শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি ব্যবসা করি। এক শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে।'
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বঙ্গভবনের সামনে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে চলতি সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করার কথা বলেছেন।
সেনাপ্রধান দেশের বাইরে থাকায় মো. সাহাবুদ্দিনকে সরাতে দুদিন সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে একদল বিক্ষোভকারী বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পিজিআর [প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট] সদস্যরা ব্যারিকেডের সামনে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আদিলুর রহমান শুভ্র। আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে তাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
এর আগে আজ বিকেল ৪টা থেকে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে একাধিক সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী।
রাত ৮টা ১৫ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নারী সদস্য মাইকে ঘোষণা দেন। এরপরে ৩০০-৪০০ জন বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড ধাক্কাধাক্কি করেন। ৮টা ২২ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারীদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টাও করেন বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা।
তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের বঙ্গভবনের ভেতরে পাঠিয়ে দেন। পরে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান উপস্থিত সেনাসদস্যরা। তারা আন্দোলনকারীদের মাইকিং করে সরে যেতে বলেন। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে এ দিন সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
তাদের কর্মসূচি থেকে বলা হয়, 'বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। আমরা চাই না সে রাষ্ট্রপতি পদে থাকুক। তাই আমরা তাকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি তিনি যেন রাষ্ট্রপতির পথ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা জানি তাকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হবে।'
বাহার উদ্দিন নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, 'রাষ্ট্রপতি চুপ্পু যে পর্যন্ত তার পদ থেকে পদত্যাগ না করবেন সে পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। [সাহাবুদ্দিন] চুপ্পু একজন মিথ্যাবাদী। সে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর। আমরা চাই না কোনো স্বৈরাচারের দোসর এই পদ থাকুক।'
আরেক আন্দোলনকারী মো.সোহাগ বলেন, 'আমরা দেখতে চাই সাহাবুদ্দিন কতদিন বঙ্গভবনে থাকতে পারে। ছাত্র আন্দোলনের আহতরা পথে পথে আর দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর রাষ্ট্রপতি কেন বঙ্গভবনে আরাম আয়েশ করবে। এই রাষ্ট্রপতি ভারতের দালাল এবং সে শেখ হাসিনার দোসর। তাকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পর থেকে পদত্যাগ করতে হবে।'
সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, '[পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার] বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি।'