বেতন না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে জাহাজের ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়: র্যাব
মেঘনা নদীর চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় মালবাহী লাইটার জাহাজ আল-বাখেরার সাত সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় জাহাজেরই কর্মচারী আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান নামে একজনকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস টিবিএসকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে আকাশ মণ্ডল জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হত্যা করেন।
পরবর্তীতে, র্যাব-১১ কুমিল্লার সিপিসি-২ কার্যালয়ে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত জানান র্যাবের উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ জানান, তিনি প্রায় ৮ মাস ধরে এমভি-আল বাখেরা জাহাজে কাজ করছেন। জাহাজের কর্মচারীরা সময়মতো বেতন এবং ছুটি পেত না, এবং মাস্টার তাদের ওপর নানা কারণে রাগান্বিত হয়ে বিনা কারণে কাজ থেকে ছাঁটাই করতেন। মাস্টারের এসব দুর্ব্যবহার এবং বেতন না পাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষুব্ধ ছিলেন আকাশ। শেষপর্যন্ত, এ ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন তিনি।
র্যাবের ভাষ্যে, গত ২২ ডিসেম্বর (রোববার) সকাল ৮টায় এমভি-আল বাখেরা জাহাজটি ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজের রাতের খাবারের তরকারীর মধ্যে ৩০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। তিনি বাদে বাকি সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
রাত আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটে আকাশ প্রথমে মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরবর্তীতে জানাজানির ভয়ে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে একে একে জাহাজে থাকা বাকি কর্মীদেরও হত্যা করেন।
ঘটনার পর ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে আকাশ নিজেই জাহাজ চালিয়ে মাঝিরচর এলাকায় পৌঁছান। সেখানে জাহাজটি চরে আটকা পড়লে, পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রলারে করে তিনি পালিয়ে যান।
আকাশের কাছ থেকে একটি হ্যান্ড গ্লাভস, একটি লোটো ব্যাগ, ঘুমের ওষুধের খালি পাতা, নিহতদের ব্যবহৃত পাঁচটি ও আকাশের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল এবং রক্তমাখানো একটি নীল জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে মেঘনা নদীর চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় মালবাহী লাইটার জাহাজ আল-বাকিরা থেকে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও ২ জন মারা যান। একজন বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জাহাজটিতে মোট ৮ জন মানুষ ছিলেন বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এছাড়া সুকানি জুয়েল নামে একজন আহত হয়েছেন।