অগ্নিকাণ্ডের পর প্রথম কর্মদিবস: যেভাবে চলছে সচিবালয়ের কাজকর্ম
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লেগে ভবনের ছয়, সাত, আট ও নয়তলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আজ (২৯ ডিসেম্বর) ছিল সচিবালয়ের প্রথম কর্মদিবস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজ সচিবালয়ে কার্যক্রম চলছে সীমিত পরিসরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্ম ও কর্মচারীরা অস্থায়ী কার্যালয় গুছিয়ে নেওয়া ও সেটআপ করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগজনিত সমস্যার ক্তহাও জানিয়েছেন।
এছাড়া নিরাপত্তার কথা মাথায় সচিবালয়ে প্রবেশও সীমিত রাখা হয়েছে।
অফিস খুললেও সাংবাদিক ও অস্থায়ী পাসধারী কিছু সরকারি কর্মকর্তা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি।
তবে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হলেও কোনো সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়নি।
সাত নম্বর ভবনে অবস্থিত কিন্তু বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, এরকম একটি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তারাও অফিস কার্যক্রম করতে পারছেন না। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটে অসুবিধা হচ্ছে। আবার নিরাপত্তার কারণে খুব বেশি লোকজনকে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ অস্থায়ীভাবে রেল ভবনে কার্যক্রম শুরু করেছে বলে বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা নোবেল দে জানিয়েছেন। তবে তারা লজিস্টিক সমস্যার কারণে আবার অন্য জায়গায় সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
৭ নম্বর ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলায় অবস্থিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই দুই তলার বেশিরভাগ অফিস ও কক্ষ পুড়ে গেছে। নথিপত্র ও ফাইল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে গেছে আসবাবপত্রও। প্রচণ্ড তাপে প্লাইউডের বোর্ড বেঁকে গেছে।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া সচিবালয়ের অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সকালে অর্থ বিভাগে একটি মিটিংও হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ বলেন, 'আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলো স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জ্বালানি উপদেষ্টা সকালে মাওয়ায় একটি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন। ওই প্রোগ্রাম শেষ করে সচিবালয়ে জ্বালানি বিভাগে অফিস করবেন।'
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগরভবনে কার্যক্রম শুরু করেছে। এই ভবনের অব্যবহৃত রুমগুলো ব্যবহার করে কার্যক্রম চালাচ্ছে এই দুটি বিভাগ ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান টিবিএসকে বলেন, তাদের দপ্তর জেনারেল পোস্ট অফিসে (জিপিও) অবস্থিত মেইলিং অপারেটর অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং অথরিটির অফিসে অফিস শুরু করেছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নূর আলম জানান, তাদের মন্ত্রণালয় ক্রীড়া পরিষদের অফিসে কার্যক্রম শুরু করেছে।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, 'সচিবালয় অত্যন্ত ফাঁকা। পুড়ে যাওয়া ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নেই। দর্শনার্থী নেই। রাষ্ট্রের অন্যান্য দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা মিটিংয়ের জন্য আসেননি। যারা এসেছেন, তারাও ঘোরাফেরা বিশেষ করছেন না।'
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়।
১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট।
দীর্ঘ ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল ৮টা ৫ মিনিটে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
অগ্নিকাণ্ডে সরাসরি কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও দায়িত্ব পালনকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী শোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) মারা যান। তিনি তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের সদস্য ছিলেন।
রাস্তা পার হয়ে পানির পাইপের সঙ্গে পাম্প লাগাতে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক নয়নকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তার মৃত্যু হয়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার ইতিমধ্যে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আজকের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।