দুর্ভাগ্যজনকভাবে চক্রান্তের খেলা আবারো শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবারো চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে ৬ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, এখনো আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সেই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।'
আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি, চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে। যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে 'সবার আগে বাংলাদেশ ' সেই দলের নেতাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। ইতিহাসে এ ঘটনা বহুবার হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই চক্রান্তকে কখনো সমর্থন দিবে না। বিএনপিকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে, কখনোই ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একজনকে বের করতে পারলেও আর দুইটা লোককে তারা সরিয়ে নিতে পারেনি। কারণ বিএনপির যে রাজনীতি , এটা হচ্ছে এ দেশের মানুষের জনগণের রাজনীতি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, মানুষের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার আনতে হবে। তাই বলে, সংস্কারের নাম করে আমরা এমন কিছু হতে দিতে পারি না, যেটা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করবে। অন্তবর্তী সরকারকে আহ্বান করে তিনি বলেন, কালবিলম্ব না করে এ সংকট থেকে মুক্ত করতে অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
ছাত্রদলকে ভ্যানগার্ড আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, 'আমাদের সামনের যোদ্ধা তারা, ছাত্রদলকে এখন জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। আমাদেরকে একটা সাইবার ওয়ার্ক করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অবস্থান সবচেয়ে বেশি রাখতে হবে। এটা যদি আমরা না করতে পারি, তাহলে এ যুদ্ধে আমরা হেরে যাব।' ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তৎপরতা বাড়ানোর অনুরোধ করে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে, এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মেধা ও মনন দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি।
গুম-খুন ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি বলেন, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের রক্তের ওপর দিয়ে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সময়ে ক্যাম্পাসে কোথাও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের থাকতে দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে সারাদেশের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নতুন ধারার রাজনীতি চালু করবে। কোথাও চাঁদাবাজি ও দখলবাজি থাকবে না।
স্বাধীনতার পর ছাত্রদল নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে ভূমিকা রেখেছে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গত ১৬ বছর বিদেশ থেকে আন্দোলনে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশছাড়া হয়েছেন। এখনো দেশের সামনে টুকটাক ষড়যন্ত্র করছে ভণ্ড প্রতারকরা, বিপদ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শামিল হয়েছে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ। গন্যঅভ্যুত্থানের পর পৃথিবীর সব দেশের নির্বাচন হয়। বছরের পর বছর ধরে সংস্কার চলমান। তাই যারা উল্টোপাল্টা কথা বলেন তাদের ইতিহাস পড়া দরকার। এসময় পাকিস্তান ও শ্রীলংকার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান করেছে দেশের জনগণ। সুতরাং নির্বাচনের বিকল্প নেই।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর থেকে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেন। বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা নানা রঙের ব্যাজ, টুপি-গেঞ্জি পরে ছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদলের প্রথম শহীদ চট্টগ্রামের মো. ওয়াসিম আকরাম, মো. সবুক মিয়া, আরিফুর রহমান রাসেলসহ নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যানার দেখা গেছে। এছাড়াও বিগত আওয়ামী লীগের আমলে গুম হওয়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইলিয়াস আলী, নুরুজ্জামান জনি, মাহাবুবুল হক বাবলু, আবু তাহের দাইয়া, সাজেদুল ইসলাম সুমন, আমিনুল ইসলাম জাকিরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ব্যানার দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদলের নিহত ১৪২ জনের নামসম্বলিত তালিকার বই প্রকাশ করে সংগঠনটি।
দিনটি উপলক্ষে এদিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হয়।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুর মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আহসান রাজিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।