জুলাইয়ের আন্দোলনকারীরা এখনও মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন— অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যেসব শিক্ষার্থীদের ঘর থেকে ধরে এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল— তারা এখনও মাথায় মিথ্যা মামলা নিয়ে ঘুরছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে, অপরাধীরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন; তাদেরকে (অপরাধীদের) কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না, প্রশ্ন রেখেছেন তারা।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বীর চট্টলার অগ্নিকন্যাদের নিয়ে আয়োজিত 'বীরত্বের গল্প শুনতে চাই" শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন অভিযোগ করা হয়।
অনুষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় নারী শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন ক্ষোভ ও প্রশ্ন করেন সমন্বয়কদের লক্ষ্য করে।
আন্দোলনকারী ফাতেমা খানম লিজা আক্তারের সঞ্চালনায় স্মৃরিচারণ করেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেহজাবিন আক্তার, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার, শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার কলি, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী নীলা আফরোজ, মীম আক্তার, ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর অভিভাবক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, রিজাউর রহমান, মাজফুজুর রহমান, শাহেদুল্লাহ ইসলাম, আরেফিন, নিজাম উদ্দিন, ইবনে হোসাইন। অনুষ্ঠানের উপস্থিত সমন্বয়করা অভিভাবক পিতা-মাতাদের সম্মানে মঞ্চ ছেড়ে দর্শক সারিতে নেমে আসেন। অভিভাবকদের মঞ্চে বসানো হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও সদস্য জোবাইরুল হাসান আরিফ।
আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার কলি বলেন, "আন্দোনকারীরা মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন। কিন্তু অপরাধীরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।"
এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেহজাবিন আক্তার ৩০ জুলাইয়ের আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, "আন্দোলন শুরুর আগেই আমাদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়। রাত পর্যন্ত আমাদের আটকে রাখা হয়।"
হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শিক্ষার্থী নীলা আফরোজ বলেন, "আমরা নারীরা দেশের জন্য কোনো স্বার্থ ছাড়া আন্দোলনে নেমেছিলাম। আন্দোলন শেষে নারীরা ঘরে ফিরে গিয়েছেন। আমরা চাই নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ুক। আমরা সেই চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরে চা চক্রের আয়োজন করেছিলাম। এখন এই আয়োজন।"
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মীম আক্তার বলেন, "আন্দোলনের সময় যে বখাটে সন্ত্রাসীরা আমাদের হুমকি দিয়েছিল, তারা এখনও বাইরে আছে। তারা এখনও বুক ফুলিয়ে চলে। তাদের বিচার কেন এখনও হয়নি?"
বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাহিন তৃণা বলেন, "বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু এরপর তাদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। তাদের প্রতিনিধিত্ব সব জায়গায় নেই। সংস্কারে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।"
আন্দোলনে আহত হয়ে হাতের আঙ্গুলের অংশ বিশেষ হারানো ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, "নারীদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। কেন শুধু পুরুষদের গল্পগুলো প্রাধান্য পাবে! নারীদের কোনো ক্ষমতার লোভ, অর্থের লোভ ছিল না। এরপরও দেশের জন্য তারা নেমেছিলেন।"
বক্তব্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর অভিভাবক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বলেন, "আমার বড় মেয়ে আন্দোলনে গিয়েছিল। ছোট মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়েন। সেও আন্দোলনে গিয়েছিল। আমরা টেলিভিশনে দেখেছিলাম, শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছেন। তখন থেকে আমি আমার সন্তানদেরও উৎসাহ দিয়েছি। আন্দোলনে আহতদের মেডিকেলে পাঠিয়েছিলাম আমরা। আমি সমন্বয়কদের বলব, আপনারা আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নিন।"