জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের জন্য কল্যাণ-পুনর্বাসন নীতি তৈরি সরকারের
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/04/img_6906.jpeg)
১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদের আক্রমণে উভয় হাত-পা হারানো, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম ছাত্র-জনতাকে এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি আজীবন মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে সরকার তাদেরকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা দেবে।
এ লক্ষ্যে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এ শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নীতিমালা ২০২৫' এর খসড়া প্রণয়ন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
খসড়াটি চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
গণঅভ্যুত্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের আক্রমণে একহাত বা এক পা হারানো, আংশিক দৃষ্টিহীন হওয়া, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা অনুরূপ আহত ছাত্র-জনতাকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এককালীন অনুদান, আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা এবং বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারিরীক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা পুনঃবাসনের ব্যবস্থাও করবে সরকার।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, '১৬ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সময়কালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী বা ইহার রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনের সদস্যদের আক্রমণে শহিদ হইয়াছেন বা পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিয়াছেন– এমন শহিদ পরিবারের আইনসম্মত ওয়ারিশগণ; ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করিয়া গুরুতর আহত এবং স্থায়ীভাবে অক্ষমরূপে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গ' পুনঃবাসন বা আর্থিক সহায়তা পাবেন।
আজীবন চিকিৎসা সেবা ও পুনর্বাসন
যেসব ছাত্র-জনতা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং সুস্থ হতে আরও চিকিৎসার প্রয়োজন আছে, তাদেরকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও পুনঃবাসন করবে সরকার। এ ধরনের আহত ছাত্র ও জনতা গুলিতে আহত হয়েছেন এবং যাদের শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম।
যেসব ছাত্র ও জনতা আহত হলেও ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম, তাদের জন্য বিনামূল্যে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করবে সরকার।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, 'গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এককালীন অনুদান পাবে। শহীদের সন্তানগণ বিনামূল্যে শিক্ষা সহায়তা পাবেন। আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শহীদ হলে তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য মাসিক অর্থ দেওয়া হবে। তবে কোনো শহীদের ওয়ারিশগণ চাইলে এককালীন অর্থ দেওয়া হবে।'
আর্থিক সহায়তা নির্ধারণ
শহীদ পরিবারগুলো কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পাবে, তা নির্ভর করবে যিনি শহীদ হয়েছেন– তার আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বয়স এবং তার ওপর পরিবারের নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে।
গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার আর্থিক সহায়তার পরিমাণও নির্ধারিত হবে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বয়স, তার ওপর পরিবারের নির্ভরশীলতা পর্যালোচনার ভিত্তিতে।
আহতদের ক্ষেত্রে যারা স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তাদের শারিরীক ও মানসিক চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করবে সরকার। তাদের মাসিক অনুদান জেলা বা উপজেলা প্রশাসন এবং চিকিৎসা সহায়তা সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, "আহতদের সারাজীবনের জন্য চিকিৎসা এবং অন্যান্য ভাতা দেওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।"
তিনি জানান, "শহীদদের পরিবার ও আহতদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২৩২ কোটি ছাড়া বরাদ্দ পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছর শহীদদের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে এবং আহতদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সহায়তা করা হবে।"
ফারুক ই আজম আরও বলেন, "গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে একটি অধিদপ্তর গঠন করা হবে। তার আওতায় নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হবে।"