হাসিনার প্রত্যর্পণের সব নথি ভারতকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ, প্রয়োজনে স্মরণও করানো হবে: মন্ত্রণালয়
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/13/received_597913879795438.jpeg)
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র ভারতে পাঠিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ যখন উপযুক্ত মনে করবে, তখন প্রত্যর্পণের বিষয়টি ভারতকে স্মরণ করিয়েও দেওয়া হবে। এসব কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতকে যে নোট ভার্বাল পাঠিয়েছে, তাতে সব প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত ছিল।
বাংলাদেশ কবে আবার ভারতকে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করবে, জানতে চাইলে আলম বলেন, "এটি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক—উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।"
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো নোট ভার্বালের পরও ভারত এখনো শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধের আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দেয়নি।
"আমরা ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি," বলেন আলম।
প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সহজ করতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট ভারতকে পাঠানো হবে কি না—প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এমনটা করা হবে না।
"জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন সম্পর্কে সারাবিশ্বই জেনে গেছে। ভারতের সঙ্গে এটি ভাগ করে নেওয়ার কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য। এটা আমরা ভারতের সঙ্গে কেন শেয়ার করব? বিভিন্ন সংস্থা এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিজেদের নির্দেশনা ও করণীয় ঠিক করবে," বলেন তিনি।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ভারতকে যে নোট ভার্বাল পাঠিয়েছিল, সেটি ছিল স্বাক্ষরবিহীন কূটনৈতিক বার্তা, যা নাম পুরুষে লেখা হয়। এটি পাঠানোর পর ভারত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
"আপনারা জানেন, এক সপ্তাহ আগে আমি নিশ্চিত করেছিলাম যে, আমরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি বার্তা পেয়েছি। এর বাইরে, এই মুহূর্তে আমার কাছে নতুন যোগ করার মতো কিছু নেই," জানুয়ারিতে বলেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কয়েকদিন আগে বলেছেন, তারা শুনেছেন ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না।
"আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, তারা রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাকে ফেরত দেবে না। আমরা এমনটাই শুনছি," বলেন তিনি।
নয়াদিল্লি থেকে কোনো জবাব না এলে নির্দিষ্ট সময় পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আবার একটি স্মারক পাঠানোর কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় পক্ষের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। "এই মুহূর্তে আমরা কোনো মন্তব্য করব না, কারণ আমরা তাদের উত্তরের অপেক্ষায় আছি।"
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১০০টির বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
বাংলাদেশ ও ভারত ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তির ১০(৩) ধারা সংশোধন করে, যাতে পলাতক অপরাধীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।