ছেলে বুয়েটে রাজনীতি করে, জানত না মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অনিকের পরিবার
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অনিক সরকার শৈশব থেকেই পরিচিত ছিলেন শান্ত ও মেধাবী ছেলে হিসেবে।
অনিকের পরিবার ও প্রতিবেশীরা বলেছেন, তিনি সবসময়ই সবার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। তার বেশিরভাগ সময় কাটত পড়াশোনায়।
অনিক ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র। শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
অনিকের জন্ম রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বড়াইকুড়ি গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে।
তার বাবা আনোয়ার হোসেন সরকার পেশায় ব্যবসায়ী, মা শাহিদা বেগম গৃহিণী। অনিক বড় হয়েছেন কড়া শাসনের মধ্যে।
মোহনপুর কেজি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন অনিক। অষ্টম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। ২০১৩ সালে একই বিদ্যালয় হতে জিপিএ ৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন নটরডেম কলেজ থেকে।
উচ্চ=মাধ্যমিক সম্পন্ন করে অনিক বুয়েটে ভর্তি হন।
অনিকের পরিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। তার চাচা বেলাল হোসেন রাজশাহী জেলা যুবলীগের সহসভাপতি।
অনিকের মামা আল মমিন শাহ গাবরু বকশিমাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং মোহনপুর উপজেলা শাখার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার পর থেকে ছাত্র রাজনীতিতে অনিকের সম্পৃক্ততা শুরু হয়। তবে নিজ এলাকায় তিনি ছাত্রলীগের উপজেলা শাখায় সক্রিয় ছিলেন না।
অনিকের বড় ভাই সোহেল সরকার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অনিক ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা খুব পছন্দ করেন।
তিনি বলেন, 'ও শুধু পড়াশোনাই করত না, প্রচুর খেলাধুলাও করত। ও বুয়েটের সেফটি ক্লাবের সাথে যুক্ত। শেরেবাংলা হলে ওঠার আগে ও ঢাকায় আমার সাথে থাকত।'
অনিকের রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি সোহেল জানতেন। কিন্তু বুয়েটের সিনিয়র ছাত্ররা তার ভাইকে রাজনীতিতে যোগ দিতে বাধ্য করেছেন বলে দাবি করেন সোহেল।
এমনকি অনিকের পরিবারও তাকে রাজনীতিতে আসতে নিষেধ করেছিল।
সোহেল বলেন, 'ও হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে জড়িয়ে পড়েছিল, কিন্তু ও নেশা করার মতো ছেলে না। এটা একটা গুজব। কিন্তু এখন চূড়ান্ত রায় যা-ই হোক, আমাদের মেনে নিতে হবে।'
ভাইয়ের জীবনের লক্ষ্য কী ছিল জানতে চাইলে সোহেল বলেন: 'আমরা দুজনেই একেবারে আলাদা স্বভাবের মানুষ। এই বাপারে আমরা কখনও আলাপ করিনি।'
অনিক বাড়ি থেকে টাকাপয়সা নিতেন কি না জানতে চাইলে সোহেল এ বাপারে কথা বলতে রাজি হননি। তার ভাই পরিবারে টাকা পাঠাতেন কি না, তা-ও বলতে চাননি সোহেল।
অনিকের মামা মমিন জানান, সারা রাত জেগে থেকে দুই ভাইয়ের লেখাপড়ার তদারকি করতেন তাদের বোন।
তিনি বলেন, 'আমি কখনও অনিককে সন্ধ্যার পর বাইরে থাকতে দেখিনি। এমনকি ও যে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তা-ও আমি জানতাম না। এই মুহূর্তে আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাইতে পারি।'
তবে অনিকের কতদিন পরপর বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন, সে ব্যাপারে সোহেলের চেয়ে ভিন্ন কথাই বলেছেন মমিন।
মমিন বলেন, 'ওর সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছে ছয় মাসেরও আগে। অনিক একা একাই ঢাকায় যাতায়াত করত।'
অনিকের বাবা-মা তাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতেন বলেও দাবি করেন মমিন।
মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অনিক উপজেলা শাখার কোনো পদে নেই।
রাজ্জাক বলেন, 'তবে ও বাড়িতে এলে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করত।'