গ্রাম থেকে এসে জড়ালেন ছাত্রলীগে, এরপর জড়ালেন আবরার হত্যায়
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির দিনাজপুরের ভাগিরপাড়া গ্রামের গর্ব ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং (ডব্লিউআরই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মনিরের নিজের এলাকায় ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিতি ছিল।
গত ৭ অক্টোবর মনিরসহ বুয়েট ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দিনাজপুর সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, "মনির তার স্কুলের দিনগুলোতে একজন মেধাবী ছাত্র ছিল এবং ২০১৪ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।"
কষ্টের দিনগুলো
স্থানীয় আম্রকানন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিরের বাবা মাহাতাব আলী বলেন, "আমি তাকে প্রতি মাসে লেখাপড়ার খরচ বাবদ প্রায় ৫ হাজার টাকা পাঠাতাম। সে তার অন্যান্য খরচ চালাতে টিউশনি করতো।"
মনিরের বাবা মাহাতাব আলী একইসঙ্গে মোহনপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, "আমার মেয়ে ও ছেলের শিক্ষার খরচ চালাতে আমি স্কুলের পর টিউশনি করাই।"
তিনি বলেন, "মনির টিউশনি থেকে যে টাকা আয় করত, মাঝে মাঝে তার কিছু আমাদেরও পাঠাত।"
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মনিরের মা এলিজা বেগম বলেন, "অনেক কষ্টে তাকে টাকা পাঠিয়েছি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল।"
গ্রামের একাকী ছেলে মনির
মনিরের গ্রামের প্রতিবেশীরা জানান, তিনি যখনই গ্রামে আসতেন, বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকতেন; কোনো বন্ধু ছিল না তার।
প্রতিবেশীরা জানান, বিকেলে তিনি নিজের চেয়ে বয়সে ছোটদের সঙ্গে মাঠে খেলতেন।
বীরগঞ্জ উপজেলার ভুলিরহাট বাজারের সাথী হোটেলের মালিক শুকুর আলী বলেন, "মনির যখন গ্রামে আসত, তাকে কখনোই স্থানীয় বাজারে যেতে দেখা যায়নি।"
বাজারের এক দোকানের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, "গ্রামের সবাই জানতো মনির ঢাকায় পড়াশোনা করা মেধাবী ছাত্র, কেউ তার সঙ্গে সেভাবে মিশতো না।"
তিনি আরও বলেন, "ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই মনির গ্রামের বাইরে পড়াশুনা করত; এবং শুধু ছুটির দিনগুলোতেই তাকে গ্রামে দেখা যেত।"
ছাত্রলীগের সঙ্গে মনিরের সম্পৃক্ততার কথা পরিবার ও বন্ধুরা জানতেন
ভাগিরপাড়া গ্রামে গিয়ে আমাদের সংবাদদাতা জানতে পেরেছেন, বুয়েটের শেরে-ই-বাংলা হলে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মনিরের নাম জড়িত থাকার কথা স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই জানেন।
তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর মনির ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
মনিরের বাবাও স্বীকার করেছেন, তার ছেলে বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, "মনির আমাকে বলেছে, তাকে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাহিত্য সম্পাদক বানানো হয়েছে।"
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনিরের দুই স্কুল বন্ধু বলেন, "ঢাকা যাওয়ার পথে মনির আমাদের সঙ্গে দেখা করতো। আমরা কেউ কেউ জানতাম, সে ছাত্রলীগের বুয়েট ইউনিটের সদস্য।"
বন্ধুরা আরও জানান, ঢাকায় গেলে তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে যেতেন, এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে মনিরের জড়িত থাকার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপন ছিল না।
তবে, আবরার হত্যাকাণ্ডে মনির জড়িত বলে তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না বলেও উল্লেখ করেন।
বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (অপরাধ) সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও, তা সম্ভব হয়নি।