১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে চারটি সমন্বিত কিচেন মার্কেট
সমন্বিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আলাদা চারটি অত্যাধুনিক কিচেন মার্কেট গড়ে তুলছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ২০২৩ সালের মধ্যে এই মার্কেটগুলো চালু করে নগরীর ১০ লাখ মানুষকে সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে নাগরিক সেবা প্রদানকারী প্রধান এই প্রতিষ্ঠানটি।
৭০ লাখ মানুষের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে প্রতিনিয়তই বাড়ছে সেবা প্রত্যাশীর সংখ্যা। সেই অনুপাতে অনুমোদিত কাঁচাবাজার ও গৃহস্থালি বাজারের সংখ্যা হাতেগোনা। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে অনুমোদিত বাজারের সংখ্যা মাত্র ১৮টি। এর বাইরে অন্তত অর্ধশত কাঁচা ও পণ্যবাজার নগরের সড়ক, ফুটপাথ ও বিভিন্ন শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সামনের ফুটপাথ ও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে। এসব বাজারের কারণে তৈরি হয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এমন অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে পরিবেশবান্ধব ও দুর্ভোগমুক্ত বাজার ব্যবস্থাপনা গড়তে কিচেন মার্কেটগুলো গড়ে তোলা হবে। আলাদা চারটি কিচেন মার্কেটে দুই হাজার ব্যবসায়ী স্থায়ীভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পাবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জনদুর্ভোগ কমবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নগরের ফিরিঙ্গিবাজার, বক্সিরহাট এবং বিবিরহাটে নিজস্ব জমির উপর ৯৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি কিচেন মার্কেট কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা গত নভেম্বর মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছে।"
"পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। আশা করছি আগামী সভাতেই প্রক্রিয়াটি শেষ হবে। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে মার্কেট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এই তিনটি কিচেন মার্কেট থেকে সিটি করপোরেশন বছরে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের আশা করছে", বলেন প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, নগরের বিবিরহাট গরু বাজারের ৮০ হাজার বর্গফুট জায়গায় 'কিচেন মার্কেট ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ' নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের অধীনে পৃথক দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বর্তমান বিবিরহাট কাঁচাবাজারের ১৯ হাজার ১৬৬ বর্গফুট জমিতে গড়ে তোলা হবে চারতলার কিচেন মার্কেট। পাশাপাশি বর্তমানে বিবিরহাট গরুর বাজারের প্রায় ৬৯ হাজার বর্গফুট জায়গায় দুইতলা একটি বাণিজ্যিক ভবন করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এছাড়া নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ও বক্সিরহাটে ৪ তলা দুটি কিচেন মার্কেট কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ৯৮ কোটি ৩৬ লাখ ব্যয় বাস্তবায়িত এই তিনটি প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি ফান্ড) এবং ১০ শতাংশ দেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
চসিকের সহ-নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন বলেন, "অত্যাধুনিক এসব কিচেন মার্কেটের গ্রাউন্ড ফ্লোরগুলোতে কাঁচাবাজার, এটিএম বুথ, ব্যাংক স্পেস এবং দ্বিতীয় তলা থেকে ওপরের ফ্লোরগুলোতে গৃহস্থালি, প্লাস্টিক পণ্য, মুদির দোকান এবং সুপার শপ বরাদ্দ দেয়া হবে। থাকবে বেসমেন্ট পার্কিং ব্যবস্থাও।"
অন্যদিকে, নগরের হালিশহর ফইল্যাতলী বাজারে ৩০ দশমিক ৮৪ গণ্ডা জমির ওপর ১১ তলা বিশিষ্ট সমন্বিত কিচেন মার্কেট তৈরীর কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, "হালিশহর ফইল্যাতলী বাজারে গড়ে তোলা কিচেন মার্কেটের ১০ তলা পর্যন্ত কাজ পুরোপুরি শেষ। আশা করছি রমজানের আগেই ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দের কাজ শেষ করে মার্কেট চালু করতে পারবো।"
২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজারে বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক কিচেন মার্কেট কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ২০ কোটি ৬৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডা)। বাকি ১০ শতাংশ চসিক তার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করছে।
ফইল্যাতলী বাজার কমিটির সহ-সভাপতি মো. ইউসুফ বলেন, "এখন আমাদের স্যাঁতস্যাতে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে বেচাবিক্রি করতে হয়। এছাড়া অনেকে রাস্তার পাশে বা ফুটপাতে বসে ব্যবসা করেন। ক্রেতারাও বাধ্য হন এই পরিবেশে আসতে। এতে যেমন যানজট তৈরী হয়, তেমনি অপরাধীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতো। কিচেন মার্কেট চালু হলে আর সেই সমস্যা থাকবে না।"