ডায়রিয়া রোগীদের ২৩ শতাংশ কলেরায় আক্রান্ত
মহাখালীর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি) হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া রোগীদের ২৩ শতাংশই কলেরায় আক্রান্ত।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫-২২ মার্চ পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের ২৩ শতাংশ রোগী কলেরা আক্রান্ত ছিলো। বর্তমানে কলেরা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বাড়ছে কিনা তা এ সপ্তাহ শেষে জানা যাবে।
আইসিডিডিআর,বি এর হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গরম বাড়ার কারণেই মূলত ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। তবে কলেরা নিয়ে উদ্বেগের কারণ হলো, কলেরা দ্রুত রোগীকে পানিশূন্য করে ফেলে।"
তিনি আরও বলেন, "কলেরা আক্রান্ত হলে ড্রিহাইড্রেশনের কারণে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে একজন অ্যাডাল্ট মানুষ মারা যেতে পারে। তবে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলে সুস্থ হওয়া সম্ভব।"
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এবিএম আবদুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, "পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব, গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং খিঁচুনি হওয়া হলো কলেরার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে, পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না।"
চিকিৎসকেরা বলছেন, তীব্র গরমে মানুষ বাইরে শরবত, আখের রস খাচ্ছে। বাড়িতেও পানি ফুটিয়ে খাচ্ছেনা তাই ডায়রিয়া বাড়ছে। আর গরমকালে ডায়রিয়ার সিজনে ভাইব্রিও কলেরা ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলেরা বেড়ে যায়। তাই ডায়রিয়া ও কলেরা প্রতিরোধে পানি ফুটিয়ে খাওয়া, বাইরের খোলা খাবার না খাওয়া, বাসায় বাসি খাবার না খাওয়া ও সাবান দিয়ে বেশি বেশি হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন তারা।
আইসিডিডিআরবি,তে গত ১৬ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ১২৬ জন। ২২ তারিখ সবোর্চ্চ ১ হাজার ২৭২ জন রোগী ভর্তি হয়। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডায়রিয়া বা কলেরায় কেউ মারা যায়নি।
ডা. বাহারুল আলম বলেন, "হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কোনো রোগী এখনো মারা যায়নি। তবে গত তিন দিনে শিশুসহ তিনজন ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাদেরকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তারা কলেরা আক্রান্ত ছিলে কিনা জানা যায়নি।"
আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, রাজধানীর কয়েকটি এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে। এরমধ্যে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও উত্তরা এলাকার রোগী বেশি। তাদের অধিকাংশই কলেরা আক্রান্ত।
বাহারুল আলম বলেন, "২২ তারিখের পর রোগী কিছুটা কমেছিলো। তাই আমরা আশা করছিলাম রোগী হয়তো কমবে। তবে আজ (শনিবার) মনে হচ্ছে রোগী আবার বাড়ছে। শুক্রবার রাত ১২টা পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮০০ রোগী ভর্তি হয়েছে, যা এর আগের দিনের একই সময়ের তুলনায় ৮৮ জন বেশি।"
"গরম বাড়লেই ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে, বৃষ্টি না হলে রোগী কমবেনা," যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ এখনো কলেরামুক্ত হয়নি। যত দিন পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হবে তত দিন পর্যন্ত আমরা কলেরা ঝুঁকিতে থাকবো। ডায়রিয়া ও কলেরা মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্যালাইন, কলেরা শনাক্তকরণ কিট রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনে কাজ করে। আমরা সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার সঙ্গে মিটিং করে ডায়রিয়া-কলেরা নিয়ে সতর্কতার বিষয়ে জানিয়েছি।
ঢাকার বাইরে টঙ্গি, গাজীপুর, কুমিল্লা থেকে রোগী আসছে আইসিডিডিআর,বিতে।
ঢাকার মত বরিশালে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। ১ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বরিশালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ জন, যা আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণ।