দুই বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখছে কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল
বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্থান্তরের জন্য প্রস্তুত কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিইজেড)। গত ২০ মার্চ বেসরকারি এ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন হয়েছে।
কুমিল্লার মেঘনায় সোনাচর মৌজায় সিইজেড গড়ে তুলছে মেঘনা গ্রুপ। এটা তাদের তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ জোনে পণ্য উৎপাদনে যাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এসময় মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানও তৈরী হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই মেঘনার শাখানদীর তীরে অবস্থিত নির্মাণাধীন এ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলটি।
মেঘনা গ্রুপের অধীনে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন (এমআইইজেড) এবং মেঘনা ইকোনমিক জোন (এমইজেড) চালু আছে। সেখানে পণ্য উৎপাদন করছে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবেন তারা।
মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুমন ভৌমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইতোমধ্যেই ফ্যাক্টরি তৈরীর জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে আমেরিকা, জাপান, জার্মানি ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান। জোনটি পুরোপুরি চালু হলে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। আশা করছি এখানে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ হবে।"
তিনি বলেন, "আমরা সবসময় ক্লায়েন্টদের সাশ্রয়ী প্যাকেজ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং ফার্স্ট ক্লাস সার্ভিসের মাধ্যমে আমাদের সেরাটা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
সুমন ভৌমিক জানান, টেক্সটাইল, টেক্সটাইল এক্সেসরিজ, আরএমজি, আরএমজি এক্সেসরিজ, কেমিকেল, স্টিল, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এখানে। এটা শতভাগ গ্রিন প্রজেক্ট। সকল কমপ্লায়েন্স নীতিমালা মেনে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণ উপযোগী জমি তৈরী হয়েছে জানিয়ে সুমন ভৌমিক বলেন, 'সাধারণত এক বছরের মতো সময় লাগে একটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন থেকে শুরু করে ভবন তৈরীতে। যত ধরনের ইউটিলিটি-ফ্যাসিলিটি দরকার সেটা এ বছরই তৈরী হয়ে যাবে। সীমানা প্রাচীর তৈরী প্রায় শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ লাইন দেয়া আছে। সেখান থেকে চাইলে এখনই বিদ্যুৎ নেয়া যাবে। তবে এ ইকোনোমিক জোনটি বড় হওয়ায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডকে জমি দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে স্টেশন বসাবে; সেখানে থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে।'
তিনি জানান, 'গ্যাস লাইন পাওয়ার জন্য তিতাস গ্যাস-এ প্রস্তাব দেয়া আছে যা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে। পাশের মেঘনার শাখানদী থেকে পানি নিয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসিয়ে পানি সরবরাহ করা হবে। থাকবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহারের সুবিধা। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানিও উত্তোলন করে সরবরাহ দেয়া হবে।'
মেঘনা গ্রুপ আশা করছে, এই বছরের মধ্যেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব ধরনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
অন্যান্য সুবিধা
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে জোনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অগ্নিনির্বাপক পরিষেবা, ইনভেস্টর রিক্রিয়েশন ক্লাব, কনভেনশন হল, পৃথক গাড়ি পার্কিং লট এবং মেডিকেল ও ডে-কেয়ার সেন্টার থাকবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, আবাসিক ভবন এবং পার্কের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা হবে।
২৪৬ একর জমিতে ১১৫ প্লট
২০১৬ সালে প্রাক যোগ্যতা সনদ পায় কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিইজেড)। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) সূত্রে জানা গেছে ইতোমধ্যে ১১ টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্তের অনুমোদন দিয়েছে তারা। গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর শিগগিরই সিইজেডকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে বেজা।
বর্তমানে, জোনটিতে ১১৫টি প্লটে ২৪৬.৩ একর জমি রয়েছে- বেশিরভাগই ৪০৪৬.৮৬ বর্গমিটারের। শিগগিরই জোনটি ৩৫০ একরে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে মেঘনা গ্রুপের।
২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বেজা।
উদ্দেশ্য অন্তত ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এবং সেখান থেকে বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি করা হবে বলে আশা বেজার৷
বিনিয়োগকারীরা কর অবকাশ, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত আমদানি, লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি, ভ্যাট-মুক্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সুবিধা এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন।
এর বাইরেও তারা আরও কিছু সুবিধা ভোগ করবে, যেমন বন্ড সুবিধা, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (ওএসএস), বিনিয়োগ প্রত্যাবর্তন, আনলিমিটেড টেলিফোনিক ট্রান্সফারস এবং পৃথক শুল্ক পদ্ধতি প্রভৃতি।