স্বাস্থ্যসেবার শীর্ষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বৃহস্পতিবার দেশের উপজেলা, জেলা, টারশিয়ারি ও বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবাসহ ৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে 'স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার ২০২০' প্রদান করা হয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের সেরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরস্কার জিতেছে; এরপরে রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে 'স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার ২০২০' তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জাহিদ মালেক বলেন, "যারা পুরস্কার পেয়েছেন, এটা তাদের ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার। আর যারা পাননি তাদের ভালো কাজে আগ্রহ বাড়াবে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সারা দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি, গুড গভর্নেন্স, চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক, টিকিট কাটা থেকে সেবা পাওয়া পর্যন্ত রোগীর কত সময় লাগে- এরকম কয়েকটি ক্রাইটেরিয়ায় ৩০০ নম্বরের মধ্যে স্কোরিং করে।
ফিল্ড ভিজিট এবং রোগীর সাক্ষাৎকারও এই ফলাফলের মূল্যায়নে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিশেষ ক্যাটাগরিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং 'ইনোভেশনের' জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমআইএস- এর এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এতো বেশি রোগীকে সেবা দেয় যে অন্য কোন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে এর তুলনা হতে পারেনা। ঢাকা মেডিকেল কখনো কোন রোগীকে ফেরায় না, সারাদেশের সব রোগীর শেষ গন্তব্যস্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সে কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজকে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।"
যশোরের জয়
স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুরস্কার পাওয়া দশটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছয়টি খুলনা বিভাগের, আবার এর মধ্যে চারটিই যশোর জেলার। এবারও দেশের দশটি সেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রথম নির্বাচিত হয়েছে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
যশোরের এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ কর্মসূচী- মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম। এই স্কিমের আওতায় কার্ডধারী দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা হাসপাতালে চেকআপের যাতায়াত ও মাতৃত্বকালীন পরবর্তী সময়ে শিশুর পুষ্টিকর খাবারের জন্য টাকা পান। এছাড়া নরমাল বা সিজারিয়ান ডেলিভারির পর ওষুধও ফ্রি পান তারা। করোনাকালীন সময়েও হাসপাতালটিতে রেকর্ড পরিমাণ নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রসূতিসেবায় বিশেষ অবদান ও হাসপাতালের উন্নয়নে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচিত 'চৌগাছা মডেল' নামে। স্বাস্থ্যসেবায় অবদানের জন্য এর আগে ১২ বার দেশসেরা আওয়ার্ড পেয়েছে হাসপাতালটি।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; এরপরে আছে যশোরের কেশবপুর, গাজীপুরের কাপাসিয়া, যশোরের অভয়নগর, বরিশালের বানারীপাড়া, যশোরের ঝিকরগাছা, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস ক্যাটাগরিতে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথম; পরের অবস্থানগুলোতে আছে ফুলতলা, বানারীপাড়া, কুমারখালী, তালা, কালীগঞ্জ, পাথরঘাটা, শ্যামনগর, মহেশপুর ও চর ফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল বলেন, "চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ বেড থেকে ১০০ বেডে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। এতে রোগীদের সেবা পাওয়ার পরিধি আরো বাড়বে। স্বাস্থ্য সেবায় অবদানের জন্য যেসব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে তা ধরে রাখতে কাজ করবো আমরা। কোভিডের কারণে আমাদের অনেক নিয়মিত কার্যক্রম থেমে গিয়েছিলো, সেগুলো আবার শুরু করা হয়েছে।"
বিভাগীয় পর্যায়ের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রথম হয়েছে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর পরেই রয়েছে রামগঞ্জ, শিবপুর, দেবহাটা, মাদারগঞ্জ, শিবগাং, বীরগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর মধ্যে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল প্রথম, কক্সবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতাল দ্বিতীয় এবং ঝিনাইদহ জেলা হাসপাতাল তৃতীয়। তারপরে রয়েছে যথাক্রমে লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতাল ও পিরোজপুর সদর হাসপাতাল।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের অফিস দেশের সেরা সিভিল সার্জন অফিসের সম্মানে ভূষিত হয়েছে। তালিকার পরের অবস্থানে রয়েছে যশোর, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর ও চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসকে শীর্ষ দুই বিভাগীয় অফিস হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শীর্ষ স্পেশালাইজড পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছে।
প্রথমে উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল সম্পর্কে সিভিল সার্জনের মূল্যায়ন ও হাসপাতালগুলোর মান্থলি অনলাইন ডাটা অ্যানালাইসিস করে শর্টলিস্ট তৈরি করে এমআইএস। তারপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এমআইএস ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে গঠিত টিম হাসপাতালগুলোতে গিয়ে সরেজমিন দেখে এবং রোগীদের ইন্টারভিউ নেয়। তার ভিত্তিতে দেশ সেরা স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান নির্নয় করা হয়।