যে কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বিল পরিশোধ করতে অর্থাভাবে পড়েছে পিডিবি
হাইলাইট:
● প্রতি মাসে বিপিডিবি ৩,৫০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনে
● বিল জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হয় বিপিডিকে
● বেসরকারি উৎপাদনকারীরা এখনও ডিসেম্বরের বিল পায়নি
● গ্যাসের সংকটের কারণে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। ফলে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও। এতে চার মাসের বিল দিতে পারেনি বিপিডিবি।
● বিপিডিবি এখন অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি অথবা বাজেট সহায়তা চায়
অস্থিরতা দেখা দিয়েছে জ্বালানির দামে। সেই অস্থিরতার ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে। জ্বালানির দামের অস্থিরতার কারণে বেসরকারি উৎপাদনকারীর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অর্থ সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
তেলভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ বাড়ার পর চার মাসের বিল বকেয়া পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র বিদ্যুৎ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানটির। ফলে বিপিডিবি এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ কেনা ও সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়াতে অথবা নিয়মিত বাজেট সহায়তা চায়।
অর্থ সংকটের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বিপিডিবির সদস্য (অর্থ) এস কে আকতার হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেট্রোলিয়ামভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ বেড়েছে। এছাড়া অর্থ বিভাগের বাজেট সহায়তাও বিলম্বিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
'তবু আমরা বকেয়া পরিশোধ করতে শুরু করেছি,' বলেন তিনি।
সাধারণত, দেশের মোট বিদ্যুতের ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আসে। আর ৬০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
বেসরকারি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য প্রতি মাসে বিপিডিবির প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়।
কিন্তু গ্রীষ্মকাল চলে আসায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। আর সেই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেড়েছে তেলভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহও।
পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে তেলভিত্তিক বিদ্যুতের উপর নির্ভরতাও বেড়েছে। আর তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে সবসময়ই বিদ্যুৎ কেনার খরচ বেড়ে যায়।
ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎসহ দেশের ৫৩টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদুৎ দৈনিক চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ সরবরাহ করে। শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি উৎপাদনকারীদের মধ্যে রয়েছে সামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ ও কনফিডেন্স।
বিপিডিবির তথ্য বলছে, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ পড়ে ১ দশমিক ২০ টাকা থেকে ৩ দশমিক ৫০ টাকা। আর ফার্নেস ও ডিজেল তেলভিত্তিক বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ ১২ থেকে ১৬ টাকা।
এদিকে গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা হয়। এর ফলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ আরও বেড়েছে।
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী, বিল ইস্যু করার তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার কথা বিপিডিবির।
কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক জানান, চার মাসের বিল বকেয়া পড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরাও পরিচালন খরচ বহন করতে ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপরীতে নেওয়া ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়েছেন। বিপিডিবিকে অবিলম্বে বকেয়া পরিশোধের আহ্বান জানান তারা।
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ইমরান করিম বলেন, সাধারণত বিপিডিবি বিল ইস্যু করার তারিখের সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করে।
'এবার একটু দেরি হয়েছে। তবে বিপিডিবি ধীরে ধীরে অর্থ পরিশোধ করছে। এখন আমরা ডিসেম্বরের বিল পাচ্ছি,' বলেন তিনি।
বর্তমানে দেশে ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে প্রায় ১৪ হাজার ৭১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে।