রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে হালদার রেণু, কেজি ২ লাখ!
উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী থেকে এবার ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কেজি। এসব ডিম প্রক্রিয়াকরণের পর উৎপাদিত রেণুর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬০ কেজি। যোগান কম, চাহিদা বেশি হওয়ায় এবার রেকর্ড ২ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি হালদার রেণু, যা এক বছর আগের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ।
২০২১ সালে প্রতিকেজি রেণুর দাম ছিলো ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ২০২০ সালে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মূলত আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গতবারের মতো এবারও কার্প জাতীয় মা মাছ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়েনি। এতেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে রেণুর দাম। মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও জেলেরা বলছে, উচ্চমূল্যে কেনা এই রেণু ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে ফেলবে।
মৎস্যচাষীরা জানান, সাধারণ রেণুর চেয়ে হালদা নদীর রেণুর গুণগত মান অনেক বেশি। তাই তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে হালদার রেণু। এবার ডিম কম পাওয়া যাওয়ার অজুহাতে মাত্রাতিরিক্ত দামে রেণু বিক্রি করছে হ্যাচারিগুলো।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এবার সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেজি। চারটি সরকারি হ্যাচারি ও ১৭০টি মাটির কুয়ায় প্রক্রিয়াকরণ করে ৬০ কেজি রেণু পাওয়া গেছে। যতটুকু জেনেছি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত রেণু বিক্রি হচ্ছে। এটি মাছচাষীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। এতো উচ্চদামে কেনা রেণু দিয়ে ওই চাষীরা কি ব্যবসা করবেন?"
হাটহাজারীর মাছুয়াঘোনা হ্যাচারীর রেণু উৎপাদনকারী মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, 'এবার খুব কম ডিম পাওয়া গেছে। ১৫০ জেলে চারদিনে মাত্র সাড়ে তিন হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে। এর মধ্যে মাছুয়াঘোনা হ্যাচারী সাড়ে ৮ কেজি, শাহ মাদারি হ্যাচারীতে ৯ কেজি ও মদুনাহাট হ্যাচারীতে সাড়ে ৬ কেজি রেণু উৎপাদন হয়েছে। বাকিগুলো মাটির কুয়া ও পুকুরে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।"
"প্রথম দিকে ১ লাখ ৮০ থেকে ১ লাখ ৯০ হাজারের মধ্যে রেণু বিক্রি হয়েছিল, বর্তমানে স্টক শেষের দিকে তাই প্রতি কেজি হালদার রেণু বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ টাকায়," বলেন মোহাম্মদ সফিউল আলম।
এবছর মে মাসের ১৪ থেকে ১৯ তারিখ খুব কম পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কেজি ডিম আহরণকারী যেমনটি নিরাশ হয়েছেন; তেমনি হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিশেষজ্ঞরাও। এখন সর্বশেষ ভরসা আগামী তিনটি জো (অমাবস্যা ও পূর্ণিমা)।
রেণু পোনা কম হওয়ায় অসাধু ভেজালকারী সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল আলম জানান, রেণু পোনাতে ভেজালকারীদের হাতেনাতে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কৃত করা হবে।
প্রবীণ হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, "মা মাছ ডিম দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তারা ডিম ছাড়ছেনা। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে মা মাছ ডিম ছাড়বে। ১ জুন থেকে ৩ জুন, ১২ থেকে ১৭ জুন অথবা ২৬ থেকে ৩০ জুন, এই তিন জো এর যেকোনো একটিতে আবারও মা-মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"