বৃক্ষরোপণ ও আবেদন ছাড়াই জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার পাচ্ছে হাটহাজারী উপজেলা
কোনো গাছ রোপণ না করেই, এমনকি বাছাই প্রক্রিয়ার জন্য আবেদন না করেই বৃক্ষরোপণে অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত জাতীয় পুরস্কার পেতে যাচ্ছে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ।
হাটহাজারী উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন ও তার স্ত্রী ফারজানা শারমীন মৌসুমী ২০১৯ ও ২০২০ সালে ব্যক্তিগত খরচে বিভিন্ন স্কুল ও সড়কের পাশে ৩০ হাজার বৃক্ষরোপন করেন।
পরে তারা বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার পেতে ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে আবেদন করেছিলেন। পুরস্কারের জন্য এই দম্পতিকে গত বছরের জানুয়ারিতে মনোনীত করা হলেও এখন তাদের বাদ দিয়ে এ পদক পাচ্ছে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনকে ব্যবহার করে এই দম্পতিকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করে নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে বাগিয়ে নিয়েছেন।
আমীন ও মৌসুমী দম্পতি বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার পেতে 'ক' (ব্যাক্তিগত) ক্যাটাগরিতে আবেদন করেছিলেন। যা ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠকে উপজেলা কমিটি কর্তৃক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।
অথচ গত ১১ মার্চ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুরস্কারের 'গ' 'প্রতিষ্ঠান' ক্যাটাগরিতে লেখা হয় হাটহাজারী উপজেলার নাম। এখানে ব্যক্তির ঘরে লেখা হয় হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমীনের নাম। অথচ পদবি ব্যবহার করে কোনো আবেদন করেননি রুহুল আমীন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটহাজারীর উপজেলা পরিষদের নামে পুরস্কার আনতে রাশেদুল আলম নেপথ্যে থেকে নাম পাল্টে দিয়েছেন। পুরস্কার গ্রহণের জন্য এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে নাম পাঠানো হয়েছে রাশেদুলের। পদক গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল বলেন, 'কেউ যদি পদে থেকে গাছ রোপণ করে তার মালিক পুরো পরিষদ। সেই হিসেবে আমিই পদক গ্রহণ করবো'।
বন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লেখা চিঠিতে আমীন ও মৌসুমী দম্পতি লিখেছেন, 'নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা কমিটি যেসব মনোনয়ন সুপারিশ করে পাঠিয়েছেন তার মধ্যে উপজেলা পরিষদের নাম নেই। আবেদন না করা প্রতিষ্ঠান কীভাবে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হলো? এ অবস্থায় পুরস্কারের আবেদন থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহারের আবেদন করছি।'
বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কারের জন্য আমীন ও মৌসুমী দম্পতি আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাঁরা দু'জন ৪০০টি বনজ গাছ, ১৩০০টি ফলদ গাছ, ৫০০টি ভেষজ গাছ, ১০০টি শোভাবর্ধনকারী গাছ ও ১০০টি দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় গাছ রোপণ করেন।
এসব গাছের মধ্যে ৯৯ শতাংশই এখন জীবিত আছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন তারা। প্রতিটি গাছের গড় উচ্চতা এখন ৪ ফুট থেকে ৭ ফুট।
জালিয়াতির ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, 'আবেদন না করে কীভাবে পুরস্কার পাচ্ছে তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।'