দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ
জেলেদের দীর্ঘ তিন মাসের অপেক্ষা ফুরিয়েছে। আষাঢ়ের ভারি বৃষ্টি ও বজ্রপাতে হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দিবাগত রাত ১টা থেকে নদীতে দলবেধে জাল ফেলে ডিম সংগ্রহ করে হাজারো জেলে ও সংগ্রহকারী। এর আগের চার জো (ডিম ছাড়ার সময়) স্বল্প পরিমাণে নমুনা ডিম পাওয়া গেলেও গতকাল রাত থেকে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ ডিম আহরণ করছেন জেলেরা।
হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া টিবিএসকে বলেন, 'দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। বজ্রবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে হালদা নদীতে প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরী হয়েছে। গতকাল রাত থেকে নয়াহাটকুম, আজিমের ঘাট, গড়দুয়ারা, মদুনাঘাট ও রামদাশ মুন্সিরহাট পর্যন্ত এলাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ২০০ নৌকায় হাজারো জেলে রাত থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন।'
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম, 'বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও নদীর স্রোতের ধরন দেখে আমরা বৃহস্পতিবার দুপুরেই বলেছিলাম এই জোতে মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ; হয়েছেও তাই। রাতে যে জেলেরা ডিম আহরণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন তারা ভালো ডিম পেয়েছেন। প্রতি নৌকায় মোটামুটি এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম মিলেছে।'
হাটহাজারীর গড় দুয়ারা এলাকার জেলে মোহাম্মদ দুলাল টিবিএসকে বলেন, 'গত তিনমাস ধরে হালদার পাড়ে রাত কাটাচ্ছি। কয়েকবার নমুনা ডিম দিলেও পরিমাণ ছিলো খুব কম। তবে এবার ভালোই ডিম পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা দেড় কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছি। রাতে ডিমের পরিমাণ বেশি ছিলো, আশা করছি আজ সারাদিন ডিম সংগ্রহ করা যাবে।'
প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে স্থানীয়রা 'জো' বলে। এই জো এর সময় প্রচণ্ড বজ্রপাতসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে হালদা নদীর বাঁকগুলোতে পানি ঘোলা ও খরস্রোতা হয়ে ফেনাকারে প্রবাহিত হয়। এ সময় নদীর বাঁকে ভৌত-রাসায়নিক ফ্যাক্টরগুলো সৃষ্টি হলে ও তাপমাত্রা অনুকূলে ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমছে বৃষ্টিপাত, বাড়ছে তাপমাত্রা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে হালদায় বাড়ছে লবণাক্ততাও। ফলে পুরোদমে ডিম ছাড়ছিলো না মা মাছ।
মে মাসে পাঁচদিনে মাত্র সাড়ে তিন হাজার কেজি ডিম পেয়েছিলো জেলেরা। সেসময় ডিমের চাহিদা বেশি হওয়ায় রেকর্ড ২ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়েছিলো প্রতি কেজি হালদার রেণু।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে হালদায় ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫০০ কেজি। রেণু পোনা হয়েছিল ১০৫ কেজি। এর আগে ২০২০ সালে নদীতে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৫ হাজার কেজি, যা এর আগের ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।