ঢাকার মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার: দিলীপ কুমার
সদ্য প্রয়াত বলিউল তারকা দিলীপ কুমার বাংলাদেশে এসেছিলেন। দেশের বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এমন তথ্য। পাশাপাশি পুরোনো পত্রিকার ফাইল বলছে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন বলিউড তারকা দিলীপ কুমার। দিলীপ কুমারে সফলতা যখন তুঙ্গে তখনই একরাতের জন্য এসেছিলেন এই দেশে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সময়টা ১৯৯৫ সাল। প্রয়াত মেয়র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আনিসুল হকের আমন্ত্রনে তিনি হোটেল শেরাটনের একটা ডিনারে অংশ নেন। সেই ডিনারে অংশ নিয়েছেলন তৎকালীন মন্ত্রী ও সরকারী আমলারা। সেখানে দুস্থ শিল্পীদের সাহাযার্থে আয়োজিত চ্যারিটি শোতে অংশ নেন তিনি। কিং অব ট্রাজেডিখ্যাত এই অভিনেতা প্রায় আড়াই ঘন্টা সেই অনুষ্ঠানে কথা বলেন। উত্তর দেন বিভিন্ন প্রশ্নের। তিনি ওই সময় মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, 'ঢাকার মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।'
এ ছাড়া তিনি দিলীপ কুমার হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটাও বলেন সেই মঞ্চে দাড়িয়ে। সেই স্মৃতিচারণ বিজিএমই এর সভাপতি ও আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক বলেন, ওই সময় দিলীপ কুমার বাংলাদেশে এসে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এত মানুষের সামনে দাড়িয়ে তিনি খুব স্বাচ্ছন্দ্য কথা বলেছেন।'
তিনি ওই সময়ের কিছু ছবি ও পেপার কাটিং দেন দ্য বিজসেন স্ট্যান্ডার্ডকে।
সেসব ঘেটে দেখা যায়, বিএফডিসি আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন দিলীপু কুমার। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ জানান এটা হয়েছিল শেরাটনের অনুষ্ঠানের পরদিন। ওই অনুষ্ঠানে পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামসহ অনেকেই বক্তৃতা দেন। তবে দিলীপ কুমারের হাতে মানপত্র তুলে দেন নায়িকা কবরী। পাশপাশি চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালক সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন তাকে ক্রেস্ট তুলে দেন। ওই অনুষ্ঠানে দিলীপ কুমার তারকাদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু কথা। তিনি তারকা হয়ে ওঠার গল্প ও সামনের পথ চলা নিয়ে কথা বলেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার জানান, ১৯৯৪ সালে আরেক ঘটনা ঘটে। তখন ঈদের আনন্দমেলা উপস্থাপনা করতেন আনিসুল হক। ওই সময়ের তুমুল ব্যস্ত ও জনপ্রিয় অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদিকে অনুরোধ করেন সেবারের আনন্দমেলায় অংশ নিতে।
হুমায়ুন ফরীদি শর্ত দেন, যদি দিলীপ কুমারের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়, তবেই তিনি আনন্দমেলায় অংশ নিবেন। কারন হুমায়ুন ফরীদি দিলীপ কুমারের দারুণ ভক্ত।
আনিসুল হক ঝুঁকিটা নিলেন। যোগাযোগ করলেন দিলীপ কুমারের সঙ্গে। তারপর একদিন হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে হাজির হলেন মুম্বাইতে। দেখা হলো দিলীপ কুমারের সঙ্গে। হুমায়ুন ফরীদি তাকে দেখে একেবারে নুয়ে সালাম করলেন। নিলেন ছোট্ট একটা সাক্ষাৎকারও। পুরো ব্যাপারটা ভিডিও করা হলো। সেটা প্রচার হলো আনন্দমেলায়। তখনই আনিসুল হক আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন দিলীপ কুমারকে। সেটাই বাস্তবায়ন হয়েছে পরের বছর।
তুষার বলেন, ফরীদি ভাইকে দিয়ে এই অনুষ্ঠানটার পরিকল্পনা আমি করেছিলাম। আনিস ভাই সেটা দারুণভাবে আয়োজন করেন। সেটা প্রচারের পর বেশ সাড়া পড়ে।
হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে দিলীপ কুমারের সেই সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন যাদুশিল্পী জুয়েল আইচও। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ওটা প্রচারের পর আমরা হুমায়ূন ফরিদিকে খুব ক্ষেপাতাম। বলতাম, তুমিও অভিনেতা দিলীপ কুমারও অভিনেতা। তাহলে তার সামনে ওভাবে নুয়ে পড়ে প্রণাম করলে কেন? ফরীদি বলত, আমি যে তার কত বড় ভক্ত তোমাদের বোঝাতে পারব না।
হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াত, প্রয়াত আনিসুল হকও। আজ চলে গেলেন দিলীপ কুমারও।