নেটফ্লিক্স থেকে কোন বোনাস পাননি ‘স্কুইড গেম’ পরিচালক
কোরিয়ান ড্রামা সিরিজ 'স্কুইড গেম' জ্বরে কাঁপছে বিশ্ব। এরই মধ্যে অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় শো হয়ে উঠেছে এটি। কিন্তু তাতে করে 'স্কুইড গেম'-এর পরিচালক হোয়াং দং-হিউকের পকেট ফুলে-ফেঁপে ওঠেনি। পরিচালক জানিয়েছেন, শো জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও নেটফ্লিক্সের কাছ থেকে কোনো বোনাস পাননি তিনি।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর কিছু ঋণগ্রস্ত মানুষকে নিয়ে স্কুইড গেমের গল্প। তারা কেউ একে অপরের পরিচিত নয়, কিন্তু সবাই মিলে নেমেছেন এক ভয়ঙ্কর খেলায়। কারণ, খেলায় জিতলেই পাবেন বিপুল পরিমাণ টাকা পুরস্কার, বদলে যাবে জীবনের মোড়। রেকর্ড ১১ কোটি ১০ লাখ সাবস্ক্রাইবার শোটি দেখার পর নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বড় শো 'ব্রিজারটন'কে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে স্কুইড গেম।
৫০ বছর বয়সী হোয়াং নিজেই স্কুইড গেমের ৯টি এপিসোড রচনা ও পরিচালনা করেছেন। এই মুহূর্তে তিনি ধনী কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে হোয়াং জানান, নেটফ্লিক্স তাকে কোনো রকম বোনাসই দেয় নি।
"আমি অতটা ধনী নই। তবে আমার যা আছে তা যথেষ্ট। প্রতি বেলার খাবার জোটানোর মতো সামর্থ্য আমার আছে। আর হ্যা, নেটফ্লিক্স আমাকে কোনো বোনাস দিচ্ছে না। তারা শুধু মূল চুক্তি অনুসারেই আমাকে টাকা দিয়েছে", বলেন হোয়াং।
ফাঁস হওয়া নথিপত্র থেকে জানা যায়, স্কুইড গেম প্রযোজনা করতে ১৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি এপিসোডের পেছনে ব্যয় হয়েছে ১.৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
অন্যদিকে, নেটফ্লিক্সের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১৪২ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার এই শোটি দেখেছেন। শুধুমাত্র স্কুইড গেমের কারণেই নেটফ্লিক্সে নতুন করে ৪.৪ মিলিয়ন নতুন সাবস্ক্রাইবার যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে 'স্কুইড গেম' থেকে নেটফ্লিক্সের আয় ৬৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (৮৯২.২ মিলিয়ন ডলার)। অর্থাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৭৬৫৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা!
পরিচালক হোয়াংয়ের ভাষ্যে, সিরিজের প্রতি পর্ব রচনা করতে তার এতটাই চিন্তা করতে হয়েছে যে তিনি নিজের ছয়টি দাঁত খুইয়েছেন!
"এটা শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় দিক থেকে ভীষণ ভুগিয়েছে আমায়। তবুও আমাকে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে হয়েছে, প্রতি পর্ব বারবার পড়তে হয়েছে। আর যেহেতু একই সাথে সিরিজের শুটিংও চলছিল, তাই কাজও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে", জানালেন হোয়াং।
হোয়াং দং-হিউক জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়টায় ব্যক্তিগত জীবনে তাকে যে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছিল; তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই সিরিজ নির্মাণ করেছেন।
জীবনের সেই সংকটময় মুহূর্তে ঋণ করে সংসার চালিয়েছেন হোয়াং, তার মা ও দাদি। ওই সময়টায় মাঝেমাঝে সিউলের কমিক বুক ক্যাফেতে গিয়ে দু'দণ্ড শান্তি খুঁজতেন হোয়াং।
হোয়াং বলেন, "টাকা ও সফলতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা মানুষের জীবনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি সিরিজে। আমি জানিনা, বাস্তবেও এমন একটা প্রতিযোগিতা থাকলে, টাকা আয়ের জন্য আমিও সেখানে যোগ দিতাম কিনা! কিন্তু যেহেতু আমি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, আমাকে এসব গল্পে নিজস্বতার একটা ছোঁয়া রাখতেই হবে।"
গত ১৭ সেপ্টেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় 'স্কুইড গেম'। হোয়াংয়ের ইচ্ছা ছিল একদিনের জন্য নেটফ্লিক্সের শীর্ষ টিভি শো হওয়া। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই হোয়াং অনুধাবন করেছেন, তিনি তার প্রত্যাশার চাইতেও অনেক বেশি কিছু পেয়ে গেছেন!
- সূত্র: ডেইলি মেইল