সুনেরাহ: জেদের বশে বিলবোর্ডের মডেল হলেন যেভাবে
সুনেরাহ বিনতে কামালের থলিতে মাত্র একটা সিনেমা। ন'ডরাই। মুক্তি পেয়েছিল গত বছর। সার্ফিং নিয়ে দেশে প্রথম নির্মিত এই সিনেমাতে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। এখনো তাকে নিয়ে আলোচনা চলে সমানতালে।
একটা সিনেমায় রাতারাতি বদলে দিয়েছিল সুনেরাহ'র জীবন। পরিচালক ও প্রযোজকেরা তার বাসায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন, এমন নয়। তবে নিয়মিত সিনেমার চিত্রনাট্য হাতে পান তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারি না এলে হয়তো এতদিনে আরও কিছু সিনেমায় অভিনয়ের ঘোষণা দিয়ে ফেলতেন সুনেরাহ। কিন্তু সেটা হয়নি। আপাতত স্ক্রিপ্ট পড়ার দিকেই মনোযোগ তার।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আড্ডা হলো এই তারকার সঙ্গে। শুরুতেই মিডিয়াতে আসার গল্পটা শোনালেন, 'এ এক মজার ঘটনা। আমি ছোটবেলায় সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই আম্মু আমাকে গানের আর ড্রইংয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বাফায়। কিন্তু এই দুটোর একটাতেও মনোযোগ দিইনি।'
'ভর্তি করে দিয়ে আসার একমাস পর আম্মু বেতন দিতে গিয়ে আবিস্কার করলেন, আমি ওই দুইটার একটাতেও ক্লাস করি না! ক্লাস করি নাচের। তখন আম্মু আর আমাকে বাধা দেননি। জোর করেনি,' বলেন তিনি।
আরও বলেন, 'আমার আগ্রহ যেদিকে, সেদিকেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর আমি কিছুদিনের মধ্যে বিটিভির তালিকাভুক্ত নাচের শিল্পী হলাম। নিয়মিত প্রোগ্রাম করি। পাশাপাশি পড়াশোনা চলতে থাকে। ততদিনে এ লেভেল শেষ করেছি।'
সুনেরাহ বড় হয়েছেন ঢাকায়। পড়েছেন ঢাকার উত্তরার স্কলাসটিকা স্কুলে। স্কুলে পড়ার সময়ই ফটোশুটে আগ্রহ তৈরি হয়। বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই দারুণ সব ছবি তোলেন।
স্কুলের পাশেই ছিল পোশাকের ব্রান্ড এসটেসি। সেটার ওপরে ছিল বিশাল এক বিলবোর্ড। সেটার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সুনেরাহকে এক বন্ধু বলেন, 'কীসব ছবি তুলিস তুই! জীবনে কখনো এসটেসির মডেল হতে পারবি?'
তখনই জেদ চেপে যায় সুনেরাহ'র। যদি ফ্যাশন মডেল হতে হয়, তবে এসটেসি দিয়েই যাত্রা শুরু করবেন বলে ঠিক করেন।
এরপরই মডেল হিসেবে নামডাক শুরু হয়েছে। তবে সেটা র্যাম্প মডেল। পোশাকের মডেল হওয়ার জন্য ডাকও পাচ্ছেন। কিন্তু এসটেসি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে নারাজ তিনি।
সুনেরাহ বলেন, 'আমি আমার কাজের ব্যাপারে নাছোড়বান্দা। আমার মাথায় কোনো জেদ চাপলে নীরবে, কাউকে না জানিয়ে, সেই লক্ষ্য পূরণ করি।'
২০১১ সালে হোটেল র্যাডিসনে একটা বড় র্যাম্প শোতে অংশ নেন তিনি। সেই শোতে কোরিওগ্রাফি করেন যুক্তরাজ্যের এক কোরিওগ্রাফার। সেটার পরপরই আরও ডাক আসতে থাকে তার। কিন্তু যথারীতি 'না'!
পরে একটি ইংরেজি ম্যাগাজিনের ফটোশুট করেন। সেটাই ছিল তার জীবনের প্রথম ফটোশুট। ম্যাগাজিন বলেই সেটাতে আগ্রহ দেখিয়েছেন সুনেরাহ।
তারপর কীভাবে কী হলো?
সুনেরাহ বলেন, 'একজন আমাকে বললেন, মডেলিংয়ে যদি সত্যি সত্যি আগ্রহ থাকে, তাহলে আমার কোনো কোরিওগ্রাফারের কাছে কিছুদিন শেখা উচিত। এ কারণে কোরিওগ্রাফার মুকুলের কাছে যাই। তার মাধ্যমে যোগাযোগ হয় এসটেসির স্বত্বাধিকারী তানজীমের সঙ্গে। তারা তখন মডেল খুঁজছিলেন। ছয়জন মডেলকে ডাকেন। আমিও তাদের একজন। ফটোশুট করি। কিন্তু সেই ছবি নিয়ে কী পরিকল্পনা, তানজীম আমাকে তখন জানাননি কিছু।'
তারপরের ঘটনা সুনেরাহ'র জন্য আরও বেশি আনন্দের। একদিন তাকে বসুন্ধরা সিটিতে ডাকেন তানজীম। সেখান থেকে গাড়িতে তুলে, কিছুদুর যাওয়ার পর ওপরে তাকাতে বলেন। চমকে ওঠেন সুনেরাহ। তার বিলবোর্ড ঝুলছে রাস্তার মোড়ে!
অবশেষে এসটেসির বিলবোর্ডে সুনেরাহ! তারপর ব্র্যান্ডটির সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন তিনি।
এভাবেই এগিয়ে চলছেন সুনেরাহ। তিনি বলেন, "আমাকে আমার বন্ধুরা ও চারপাশের মানুষ নানা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে: 'সুনেরাহ এটা পারবে না, ওটা হবে না...!' এইরকম শুনে নিজেই নিজেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তারপর সেটা অর্জন করেছি। তাই তাদের কাছে আমি ঋণী।'
সুনেরাহ এখন এসটেসির অ্যাপারেল ম্যানেজার অ্যান্ড ইন হাউস স্টাইলিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে পোস্ট থাকলেও এসটেরিস ক্রিয়েটিভ ব্রান্ডিং ও মার্কেটিংয়ের কাজগুলো তিনি করেন।
এ ছাড়া অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে। এ বছর 'ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প' সিরিজের নাটকেও দেখা গেছে তাকে।
তিনি বলেন, 'যেহেতু অভিনয়ে নাম লিখিয়েছি, তাই সব ধরনের চরিত্রে এবং সব জায়গায় কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সেটা হতে হবে সিনেমা বা সিরিজ।'
সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো খুব তাড়াতাড়ি নতুন কাজের খবর দিতে পারবেন এই অভিনেত্রী।