তিনি ছবি তুলতেন মনরো, টেলর, সোফিয়া লরেনদের
৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন হলিউডের সেলিব্রিটি ফটোজার্নালিস্ট ডগলাস কার্কল্যান্ড। দীর্ঘ ৬০ বছরের ক্যারিয়ারে কার্কল্যান্ড মেরিলিন মনরো, এলিজাবেথ টেলর, সোফিয়া লরেনসহ বিখ্যাত তারকাদের দুর্দান্ত সব পোর্ট্রেট উপহার দিয়েছেন ভক্তদের। কাজ করেছেন কোকো শ্যানেলের মতো নামী ডিজাইনারদের সঙ্গেও। গত ২ অক্টোবর লস অ্যাঞ্জেলসে হলিউড হিলসের নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে লুক ও লাইফ ম্যাগাজিনের মতো পত্রিকায় ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করলেও এরপর কার্কল্যান্ড নিজেকে ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিভিন্ন ম্যাগাজিন ছাড়াও, হলিউড স্টুডিও ও অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সির হয়ে কাজ করেছেন কার্কল্যান্ড। তারকাদের বাসাবাড়ি কিংবা মুভি সেটেও সবসময় আমন্ত্রিত থাকতেন তিনি।
১৯৬১ সালে লুক ম্যাগাজিনে কাজ শুরু করার এক বছর পর কার্কল্যান্ড আকস্মিকভাবেই জীবনে প্রথম কোনো বড় তারকার ছবি তোলার সুযোগ পান। রিপোর্টার জ্যাক হ্যামিলটনের সঙ্গে লাস ভেগাসে যান এলিজাবেথ টেলরের ইন্টারভিউ নিতে। কিন্তু দেখা করার পর এলিজাবেথ জানান তিনি শুধু সাক্ষাৎকার দিবেন। কোনো ছবি তুলবেন না।
২০২১ সালে ভিনটেজ নিউজ ডেইলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্কল্যান্ড সেসব ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, সাক্ষাৎকার শেষে ছবির জন্য রাজি করাতে তিনি এলিজাবেথের হাত ধরে বলেন, 'আমি এই ম্যাগাজিনে নতুন। আপনি যদি ছবি তুলতে দেন তাহলে সেটা আমার জন্য কত বড় ব্যাপার হবে বুঝতে পারছেন?'
'আমি তাঁর হাত ছাড়িনি। জাঙ্গল গারডেনিয়ার পারফিউম ব্যবহার করেছিলেন এলিজাবেথ। আমি সেটার ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ ভেবে এলিজাবেথ বললেন ঠিক আছে আগামীকাল রাত ৮টায় আসুন'।
এরপরের ঘটনা দারুণ। হলুদ জ্যাকেট আর ডায়মন্ড এয়ারিং পরা এলিজাবেথ টেইলরের সেই ছবি লুক ম্যাগাজিনের '৬১ সালের ১৫ আগস্টের সংখ্যায় প্রচ্ছদ হিসেবে ছাপা হয়।
এরপর কার্কল্যান্ডকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেবছরের শেষ দিকে লস অ্যাঞ্জেলসে মেরিলিন মনরোর ছবি তুলতে পাঠানো হয় তাকে। মনরোর বাড়িতে সাক্ষাৎ করেন তারা। মনরো জানান এই শুটের জন্য তার প্রয়োজন হবে একটা সাদা সিল্ক চাদর, ফ্র্যাঙ্ক সিনাট্রা রেকর্ডস আর ডম পেরিনিয়ন শ্যাম্পেন।
চারদিন পর এক স্টুডিওতে ফটোশুটের আয়োজন করা হয়। রোব ছেড়ে মনরো বিছানায় নিজেকে সাদা সিল্ক চাদরে আবৃত করে নেন। মনরোর কোনো দিকনির্দেশনার প্রয়োজন পড়েনি। নিজে থেকেই একে একে সব পোজ দিচ্ছিলেন তিনি। কখনো বালিশ জড়িয়ে, কখনো চাদরে মুখ লুকিয়ে আবার কখনো ক্যামেরার দিকে পিঠ ফিরিয়ে দারুণ সব পোজ দেন তিনি।
কার্কল্যান্ডকেও ছবি তোলার জন্য বেশ কায়দা করতে হয়। কখনো সামনা-সামনি, কখনো উঁচু ব্যালকনিতে চড়ে সেসব ছবি তুলেন তিনি।
'আমি কারিগরি সব দিক ঠিক রেখেছিলাম। কিন্তু আসলে এই ছবিগুলো সৃষ্টি করেছিলেন মেরিলিন মনরো নিজেই,' ২০১২ সালে সিবিএস দিস মর্নিং-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি।
লুক এবং লাইফ ম্যাগাজিনের অন-সেট ফটোগ্রাফার হিসেবে কার্কল্যান্ড ১০০টিরও বেশি মুভি নির্মাণের সময় ছবি তুলেন। এসব ছবির মধ্যে রয়েছে "বুচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সানডান্স কিড," "২০০১: আ স্পেস ওডিসি," "ফিডলার অন দ্য রুফ," "সোফিস চয়েস," "রেইন ম্যান" এবং ২০০১ সালে বের হওয়া "মোলান রুশ!"
১৯৬২ সালের আগস্টে প্যারিসে লুক ম্যাগাজিনের জন্য কোকো শ্যানেলের সঙ্গে তিন সপ্তাহ কাটান কার্কল্যান্ড। প্রথমদিকে কোকো নিজের ছবি তুলতে দিতে চাননি। শুধু তার ডিজাইন করা পোশাকগুলোর ছবি তোলার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সেসব ছবি দেখার পর তার মত বদলে।
কাজের সময় তাকে পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দিলেন কোকো। সবসময় একটা টুপি পরে কাজ করতেন কোকো শ্যানেল। তাকে ঘিরে থাকতেন বাকি সব কর্মীরা। সে অবস্থাতেই তার ছবি নিলেন কার্কল্যান্ড।
শেষ দিন কোকো নিজেই তাকে ভার্সাই প্রাসাদে নিয়ে যান। সেখানেই প্রাসাদের বাগানে একা হাঁটতে থাকা কোকোর শেষ ছবিটি তোলা হয়।
ফিল্ম সেটে ফটোগ্রাফির জন্য ২০১১ সালে আমেরিকান সোসাইটি অফ সিনেমাটোগ্রাফারস প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান কার্কল্যান্ড।
ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে 'লাইট ইয়ারস: থ্রি ডিকেডস ফটোগ্রাফি এমং দ্য স্টারস' (১৯৮৯), 'আইকনস' (১৯৯৩), 'লিজেন্ডস' (১৯৯৯) এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রকাশিত 'উইত মেরিলিন: এন ইভিনিং ১৯৬১'।
- সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস