‘ব্যর্থতার বোঝা’য় ৫০ বছর পর কবিতা প্রকাশ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিলেন জয় গোস্বামী
আর কোনোদিন প্রকাশ্যে আসবে না 'মেঘবালিকা' কিংবা 'বেণীমাধব'রা। লেখা থেকে ছুটি না নিলেও জনতার দরবার থেকে অবসর নিয়েছেন জয় গোস্বামী।
মাসখানেক আগেই লেখক জানিয়েছিলেন, এবার শুধু আত্ম-পরীক্ষার সময়। আর কোনোদিন প্রকাশিত হবে না তার কোনও লেখা। ঘরে বসে অবশ্য অবিরত লিখে চলেছেন তিনি।
সম্প্রতি বেঙ্গলি মিউজিক ডিরেক্টরি নামের এক ইউটিউব চ্যানেলে মনের ঝাঁপি খুলেছেন বর্ষীয়ান কবি। ৭১ বছর বয়সী কবি জানান, "আমি ৫০ বছর লিখেছি। তারপর অবসর গ্রহণ করেছি। একটা বুলেটিন প্রকাশ করে জানিয়েছি, আমি চেষ্টা করেছি ৫০ বছর ধরে, কিন্তু আমার লেখা হয়নি। আমি লিখতে পারিনি। আমার লেখা উপযুক্ত হয়নি।"
লেখক মনে করেন, তার লেখনীর বহিরঙ্গ অনেক মানুষকে ছুঁলেও হয়ত অন্তরটা বুঝতে পারেননি। নিজেকে ব্যর্থই মনে করেন বেণীমাধবের স্রষ্টা।
জয় গোস্বামী বলেন, "আমার জীবিকা ছিল লেখা। আমি লিখে উপার্জন করতাম। যখন লেখা ছেড়ে দিলাম তখন আমার উপার্জন কমে গেল।….. আমি বাড়িতে বসে লিখি কিন্তু ছাপাই না।"
এখনো একা ঘরে বসে লিখে চলছেন জয় গোস্বামী। যে লেখা কখনও কেউ জানবে না, কেউ পড়বে না।
'কবিতা প্রকাশের ৫০ বছরে' নামক এক বিনামূল্যের পুস্তিকায় নিজের নতুন লেখা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। সেই কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, "নিজের ব্যর্থতার উপর নিজে রাগ করে কী করব? সেটা মেনে নিতে হবে। মেনে নাও তুমি পারোনি।"
দু-দশক আগেই পেশাদারভাবে লেখালিখি ছাড়ার চিন্তাভাবনা ঘিরে ধরলেও মেয়ে ছোট, সংসারের চাপে জয় গোস্বামী তা ছাড়তে পারেননি। কিন্তু আজ আর পিছুটান নেই।
নিজের লেখা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তে অনেকটা আক্ষেপের সুরে জয় গোস্বামী বলেন, "আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কেউই আসেনি। একটি মাত্র মেয়ে এসেছিল। একজন প্রকাশক, চোখে জল নিয়ে। বাকি কেউ আসেনি, কেউ ফোন করেনি। তাতেই বুঝে গেলাম আমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি লিখব না, তাতে কারো কিছু যায়-আসে না। এটায় আমি একটা ফ্রিডম পাই, একটা শান্তি পাই।"