শেক্সপিয়ার, সিলভিয়া প্লাথ, এলিয়টের চেয়ে চ্যাটজিপিটির লেখা কবিতা বেশি পছন্দ পাঠকের!
সম্প্রতি একটি গবেষণায় চ্যাটজিপিটি ৩.৫ ব্যবহার করে ওয়াল্ট হুইটম্যানের ভাষাশৈলীতে একটি কবিতা লেখা হয়েছিল। লেখানোর পরে কবিতাটি প্রায় ৭০০ জন সাধারণ পাঠককে পড়তে দেওয়া হয়।
এই পাঠকদের কবিতার ওপর কোনো বিশেষায়িত জ্ঞান নেই। ক্লাসিক ইংরেজি কবিতা ও এআইকে (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে কয়েক সেকেন্ডে লেখানো একই লেখনশৈলীর কবিতা দেওয়া হয় তাদেরকে। তারপর বলা হয় কোনটি বেশি ভালো, তা বাছাই করতে।
গবেষণাটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লেখা কয়েক ডজন কবিতার সঙ্গে চসার, শেক্সপিয়ার, টি.এস. এলিয়ট, সিলভিয়া প্লাথ, এমিলি ডিকিনসন ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো ইংরেজি ভাষার বিখ্যাত কবিদের লেখার তুলনা করা হয়।
সম্প্রতি 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টস'-এ নতুন ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা দুই ধরনের পরীক্ষা চালান—১. অংশগ্রহণকারীদের একটি কবিতা দিয়ে জানতে চাওয়া হয় সেটি মানুষের লেখা নাকি এআইয়ের লেখা; এবং ২. কবিতাগুলোর মান কেমন, তা জানতে চাওয়া হয়।
দুটি ক্ষেত্রেই এআইয়ের লেখা কবিতা মানুষের লেখা বলে ভোট পেয়েছে; অনেকে তো মানুষের লেখা কবিতার চেয়ে এআইয়ের লেখা কবিতাই পছন্দ করেছেন বেশি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গবেষকরা চ্যাটজিপিটি থেকে পাওয়া 'সেরা' কবিতা বাছাই করেননি। বরং প্রথম নির্দেশনায় যে লেখাটি দিয়েছে, সেটিই ব্যবহার করা হয়েছিল।
এর কারণ কী? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে, কবিতা হৃদয়ঙ্গম করা স্বভাবতই কঠিন। আর অংশগ্রহণকারী পাঠকরা সহজবোধ্য কবিতাগুলোই পছন্দ করতেন। তারা বিশ্বাস করেছেন, এই কবিতাগুলো মানুষেরই লেখা।
পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষণার সহ-লেখক ব্রায়ান পোর্টার বলেন, 'ফলাফল বলছে, গড়পড়তা পাঠক এমন কবিতাই পছন্দ করেন, যা সহজে বোঝা যায়।"'
গবেষণায় অংশ নেওয়া পাঠকরা টি.এস. এলিয়টের মতো কবিদের লেখাকে 'অলীক' বলে মনে করেছেন। তাদের মতে, এরকম ভাষায় লেখা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। সবচেয়ে বেশি রেটিং পাওয়া পাঁচ কবিতার সবগুলোই লিখেছে এআই। আর সবচেয়ে কম রেটিং পাওয়া কবিতাগুলো মানুষের লেখা।
পোর্টার জানান, অনেক অংশগ্রহণকারী বলেছেন, কবিতায় আবেগীয় উপাদানের উপস্থিতিই বলে দেয় যে সেটি মানুষের লেখা। যদিও তাদের বাছাই করা ওই কবিতাগুলো এআই-ই লিখেছে। আবার অনেকে মানুষের লেখা জটিল বা বিভ্রান্তিকর লাইন পড়ে ধরে নিয়েছেন, সেগুলো এআইয়ের ত্রুটি, কবির ভাষা নয়।
এ গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল এআই মানুষের লেখনশৈলী কতটা অনুকরণ করতে পারে, তা যাচাই করা। এ পরীক্ষায় এআই সফলভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে।
পোর্টার বলেন, 'এই পরীক্ষার থেকে পাওয়া মূল ফলাফল হলো: এআইয়ের এমন কবিতা তৈরির সক্ষমতা আছে যা মানুষের লেখার মতোই আবেগ ও আইডিয়া প্রকাশ করে।'
সমালোচক, একাডেমিক কিংবা কবিতা বিশেষজ্ঞরা দল এ বিষয়ে আরও নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন কি না, এ প্রশ্নও এসেছে।
স্পেনের একদল একাডমিক ইতিমধ্যে এ প্রশ্ন তুলেছেন। আর্জেন্টাইন লেখক প্যাট্রিসিও প্রনের যৌথ গবেষণায় তারা এআইয়ের লেখা গল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। এআইয়ের লেখা ও মানুষের লেখা সমালোচকদের একটি প্যানেল দিয়ে যাচাই করিয়েছেন তারা। এ লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে মানুষ।
এ গবেষণার লেখক অধ্যাপক হুলিও গঞ্জালো বলেন, 'সমালোচক ও সাধারণ পাঠকের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।'
আরেক গবেষক গুইলার্মো মার্কো বলেন, 'এআই অনায়াসেই সাধারণ পাঠকদের বিভ্রান্ত করতে পারে।'
গবেষণায় আরেকটি মজার ব্যাপার দেখা গেছে। অংশগ্রহণকারীকে জানানো হয়েছে তার পছন্দ করা কবিতাটি এআইয়ের লেখা, আপনাআপনিই সঙ্গে ওই কবিতার ওপর তার পছন্দের মাত্রা কমে গেছে। এই প্রতিক্রিয়া যন্ত্রের উৎপাদিত শিল্পের প্রতি মানুষের সন্দিহান মানসিকতাই প্রকাশ করে।