পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী হয়েও যিনি পরে নেতৃত্ব দেন ভাষা সংগ্রামে
১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এ কে এম রফিক উল্লাহ চৌধুরী দেশভাগের পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানিদের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তমদ্দুন মজলিসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সক্রিয় কর্মী হিসেবে যোগ দেন ভাষা সংগ্রামে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্বও দেন।
১৯২৩ সালে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপে জমিদারপুত্র হালিম উল্লাহ চৌধুরীর ঘরে জন্ম নেন এ কে এম রফিক উল্লাহ চৌধুরী। মায়ের নাম নাজমুন নেসা চৌধুরী। রফিক উল্লাহ চৌধুরী ছিলেন কালাপানিয়া ইউনিয়নের প্রখ্যাত জমিদার খুরশিদ আলম চৌধুরীর নাতি। তাদের আদিনিবাস ছিলো ফেনী জেলার শর্শাদিতে।
মক্তবভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের পর ১৯৩২ সালে কাটগড় গোলাম নবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন রফিক উল্লাহ চৌধুরী। ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের মুসলিম হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। পরে ১৯৪৩ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯৪৬ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী (বি কম) পাস করেন।
স্কুলজীবন থেকেই 'নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের' সদস্য ছিলেন এ কে এম রফিক উল্লাহ চৌধুরী। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তার সামাজিক কার্যক্রম শুরু হয়। কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যয়নকালে পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৬ সালে 'ক্যাপ্টেন রশিদ আলী দিবসে' কলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে তার মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ায় তিনি চট্টগ্রামে চলে আসেন। যোগ দেন তমদ্দুন মজলিসের ভাষা সংগ্রামে। ১৯৫২ সালে তমদ্দুন মজলিসের পক্ষে চট্টগ্রামের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। নেতৃত্ব দেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবির আন্দোলনে।
১৯৫৯ সালের ১৬ অক্টোবর বেগম জোলেখা খাতুন চামেলী চৌধুরীকে বিয়ে করেন এ কে এম রফিক উল্লাহ চৌধুরী।
১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত খিলাফতে রাব্বানী পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।
১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে দেশের প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি সন্দ্বীপের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরোধিতা করে ১৯৮৯ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। শেষজীবনে আর কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন না।
চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ তারই অবদান। ২০১১ সালে তাকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাধীনতা স্মারক সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।
এ কে এম রফিক উল্লাহ চৌধুরী ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সার্জিস্কোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
টিবিএস ও নগদ-এর যৌথ উদ্যোগ