মাত্র ১৪ বছর বয়সে রাষ্ট্রভাষার চেতনা ছড়িয়ে দেন আব্দুস সালাম
মাত্র ১৪ বছর বয়সে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কিশোর আব্দুস সালাম ঝুঁকে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভাষার দাবিতে সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
আব্দুস সালাম ছাত্রাবস্থায় লক্ষ্য করেন স্কুল ও কলেজে উর্দু ভাষা শিক্ষার জন্য অযাচিত চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাঙ্গালি শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়টি কঠিন ছিলো। এই ঘটনা তাকে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পটিয়া ও চট্টগ্রাম শহরে মিছিল-সভায় অংশ নেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনে আব্দুস সালামের সঙ্গী ছিলেন মফিজুর রহমান সাদা, আহমেদ হোসেন, সরেন্দ্রু পাল ও বজেন্দ্র নাথ শীল। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মুসলিম লীগ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি।
আব্দুস সালামের নিজ হাতে লেখা এক চিঠি থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার করার দাবিতে মিছিলে পুলিশের গুলি করার খবর ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম এসে পৌছায়। সেদিন পটিয়াসহ পুরো চট্টগ্রামের স্কুল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভে অংশ নেন।
আব্দুস সালাম ১৯৩৮ সালের ১লা জুন পটিয়া উপজেলার পাইরুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক দুরবস্থার কারণে শৈশবে পড়ালেখা ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে মুদির দোকানে চাকরি করেন। পরবর্তীতে মা আছোবা খাতুন তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ১৯৫২ সালে ১৪ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করান। সে সময়ই তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন।
তিনি ১৯৫৮ সালে গৈড়লা কেপি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৬২ সালে বোয়ালখালী স্যার আশুতোষ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৯ সালে বাঁশখালী আলাওল ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
১৯৬২ সালে এইচএসসি পাশ করে নিজের স্কুল গৈড়লা কেপি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। একটানা ৪০ বছর শিক্ষকতা করে ২০০২ সালে অবসরে যান। নেতৃত্ব দিয়েছেন শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে; ১২ বছর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ষাটের দশকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গেরিলা সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি সিপিবি পটিয়া উপজেলার নেতৃত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সিপিবির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি দলের হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। ১৯৯৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে পটিয়া আসনে কাস্তে মার্কা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন আব্দুস সালাম মাস্টার।
ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল চিন্তা চেতনায় ঋদ্ধ আবদুস সালাম মাস্টার শুধু একজন শিক্ষক নন, ছিলেন শিক্ষাব্রতীও। প্রিয় ছিলেন ভিন্ন পথের, ভিন্ন মতের মানুষদের কাছেও। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন এই সংগ্রামী পুরুষ।
আব্দুস সালাম মাস্টারের সন্তান সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু বলেন, "বাবা ছিলেন আজন্ম সংগ্রামী। কৈশোরে ভাষা আন্দোলনে ও তারুণ্যে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে অংশ নেন দেশ গঠনে। দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতাকালে তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কথা বলে গেছেন। আজীবন লড়াই করেছেন মেহনতি মানুষের জন্য, কখনো অবিচারের কাছে মাথা নত করেনি।"
টিবিএস ও নগদ-এর যৌথ উদ্যোগ