নাগরনো-কারাবাখ: শত বছরে থামলো যে লড়াই
আন্তঃরাষ্ট্রীয় সরাসরি যুদ্ধের অবর্তমানে বিশ্ব যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলো তখন পুরনো একটি দ্বন্দ্বের জের ধরে রাষ্ট্রের মধ্যকার যুদ্ধ নতুনরূপে আবারও ফিরে আসে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার দ্বিতীয় নাগরনো-কারাবাখ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে।
নতুনরূপে বলতে হচ্ছে, কারণ এ সংঘাতে আধুনিক যুদ্ধের নতুন মাত্রার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এক মাস দশ দিন পর গত ১০ নভেম্বর মস্কোর প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় বাকু ও ইয়েরেভান। যুদ্ধবিরতি হলেও কৌশলগতভাবে ও প্রকৃত অর্থে যুদ্ধে জয়লাভ করেছে আজারবাইজান। পরাজয়ের পর আর্মেনিয়ায় ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে আজারবাইজানের জনগনের নিকট শাসকগোষ্ঠীর একনায়কতন্ত্র এক ধরনের বৈধতা লাভ করেছে বলে ধারণা করা যায়।
প্রথমে রাশিয়ান সাম্রাজ্য ও পরবর্তীতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সূচনা মূলত বিংশ শতাব্দীতে। উল্লেখ্য আজারবাইজানের বাসিন্দারা মূলত তুর্কী ও শিয়া মতাবলম্বী। এবং আজারবাইজান মুসলিম বিশ্বের একাধারে সর্বপ্রথম প্রজাতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। অন্যদিকে ঐতিহাসিকভাবে আর্মেনিয়া হচ্ছে বিশ্বের সর্বপ্রথম খ্রিষ্টান দেশ।
রুশ বিপ্লবের পর ১৯১৮ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে দুটি দেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর এই দুই দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম যুদ্ধের সূচনা হয়। তখন দুটি দেশই নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু রুশ বিপ্লবের দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ বলশেভিকদের বিজয়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা হওয়ার মধ্যে ১৯২৩ সালে দুটি দেশই সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্থান লাভ করলে যুদ্ধের এক প্রকার সমাপ্তি ঘটে। আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরনো-কারাবাখের অবস্থান হয় আজারবাইজান সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত স্বায়ত্তশাসিত 'অবলাস্ট' হিসেবে।
তবে ১৯৮০'র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন দুর্বল হতে শুরু করলে নাগরনো-কারাবাখ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৮০ শতাংশ আর্মেনিয়ানদের আইনসভা আর্মেনিয়ার সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়, যার কারণে ১৯৮৮ সাল থেকে দুটি জাতির মধ্যকার গেরিলা সংঘর্ষ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে দুটি দেশই স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার সঙ্গে আজারবাইজানে অন্তর্ভুক্ত নাগরনো-কারাবাখ কোনরূপ অনুমতি ছাড়াই ও এ অঞ্চলের আজারি জনগোষ্ঠী অংশগ্রহণ ব্যাতীত এক গণভোটে স্বাধীনতার রায় (যা বাস্তব অর্থে আর্মেনিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শামিল) দিলে ১৯৯২ সালে পূর্ণরূপে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়; যুদ্ধে আর্মেনিয়ান বাহিনীর সক্ষমতার ফলে ৪ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের নাগরনো-কারাবাখ এবং তার আশেপাশে অঞ্চলসহ আজারবাইজানের মোট আয়তনের ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার দখল করে নেয় আর্মেনিয়া। এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ১৫ লক্ষ জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়, যাদের সিংহভাগ আজারি। আর্মেনিয়া এ অঞ্চলকে তাদের মুখাপেক্ষী 'আর্ট্সাক প্রজাতন্ত্র' বলে স্বীকৃতি দিলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তা আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত।
এ যুদ্ধবিরতির চুক্তির পরও গত প্রায় ২৬ বছরে দুটি দেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী সংঘাত ও সংঘর্ষ লেগেই থাকতো। আর্মেনিয়ার তুলনায় আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ার ফলে এ অঞ্চল পুনর্দখল করার বাস্তব কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি আজারবাইজান। তবে এ অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা দেয় ১৯৯৯ সালে আজারবাইজানের উপকূলবর্তী কাস্পিয়ান সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল আবিস্কার হওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অভাবনীয় সমৃদ্ধি অর্জন করলে। উৎপাদিত গ্যাস ও তেল রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ উপার্জিত অর্থ আজারবাইজানের শাসক গোষ্ঠী দেশে ক্ষমতা স্থিতিশীল রেখে সামরিক বাহিনীতে বিনিয়োগ করে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করে তোলায় মনোযোগ দেয়।
তারপর বিভিন্ন সময় ছোটখাটো সংঘর্ষ হলেও ২০১৬ সালে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান ৫ দিনের সংক্ষিপ্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যাতে হতাহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০০। এ সংঘাতে স্পষ্ট হয় যে আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনী থেকে অনেকগুণ উন্নত ও আধুনিক হলেও আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী সুবিধা করতে পারেনি আর্মেনিয়ান সৈন্যদের তূলনামূলক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে। এ সংঘাতের ফলে আজারবাইজান রণক্ষেত্রের একটি ধ্রুব সত্য নতুন করে উদঘাটন করে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও যন্ত্রপাতি কেনা গেলেও অর্থ দিয়ে রণকৌশল ও রণদক্ষতা অর্জন হয় না। সেজন্য এ সংঘাতের পর আজারবাইজান নতুন কৌশল অবলম্বন করে।
২০১০ সাল থেকেই তুরস্কের সঙ্গে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা ও পারস্পরিক সামরিক সহায়তা চুক্তি বিদ্যমান। সেই সমঝোতার জায়গা থেকে ২০১৬ সালের পর থেকে সামরিক সক্ষমতা বিনিময় ও যৌথ মহড়া বাড়িয়ে ফেলে। এ বছরের জুলাই ও আগষ্টেই তুরস্কের ১১ হাজার সৈন্যের সঙ্গে যৌথ মহড়া দেয় আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী। জুলাইয়ের প্রথমভাগে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের পরই এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি এ মহড়ায় অংশগ্রহণ করে তুরস্কের বিমান বাহিনীর ফাইটার জেট, অস্ত্রবাহী ড্রোন ও লং রেঞ্জ আর্টিলারি। তুরস্ক ও আজারবাইজানের এ সম্পর্কের উষ্ণতা প্রকাশ্যে লক্ষ্য করা যায় আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইটে। দীর্ঘদিন ধরেই তুরস্ক জ্বালানির জন্য আজারবাইজানের উপর নির্ভরশীল এবং তার সাথে বৃহত্তর তুর্কীয় জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্ক অনেক গভীরে, যে সম্পর্ককে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে 'এক জাতি, দুই দেশ' বলে অভিহিত করা হয়। অর্থনৈতিকভাবে মন্দায় থাকলেও কৌশলগত দিক দিয়ে আজারবাইজান তুরস্কের অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে তুরস্ক এ ব্যাপার এড়িয়ে যেতে পারে না।
তাছাড়া আজারবাইজানের অস্ত্র আমদানির অন্যতম স্থান হলো ইসরায়েল। ২০১৬ সালেই ইসরায়েলের 'লোওরা ব্যালিস্টিক মিসাইল' ও অন্যান্য লং রেঞ্জ এট্যাক ওয়েপন ক্রয় করতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে। অন্যদিকে ইসরায়েলের ৪০% পরিমাণ জ্বালানি রপ্তানি করে আজারবাইজানও ইসরায়েলের কৌশলগত দিক দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। রাশিয়াও আজারবাইজানের কাছে উন্নত যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি করে। সুতরাং আজারবাইজান একই সাথে তুরস্ক, ইসরায়েল ও রাশিয়ার মতো বিশ্বের প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আমদানি করে।
অন্যদিকে আর্মেনিয়ার মিত্র শক্তি বলতে রাশিয়া, ইরান, ফ্রান্স ও বিশ্বে অভিবাসী হিসেবে ছড়িয়ে থাকা আর্মেনিয়ানদের একটি বিশাল অংশ। রাশিয়ার সঙ্গে আর্মেনিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং তার ধারাবাহিকতায় ন্যাটোর মতো রাশিয়ার নিজস্ব সামরিক বলয় 'সিএসটিও' এর সদস্য আর্মেনিয়া, যার কারণে রাশিয়ার ৩০০০ সৈন্যর সামরিক ঘাঁটিও আছে আর্মেনিয়ার গুমরি শহরে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে ও রাশিয়ার কাছে নাগারনো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃত হওয়ায় এ অঞ্চল আক্রান্ত হলে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা বলয়ে পড়ে না বলে রাশিয়া সংঘর্ষ এড়িয়ে যাচ্ছে।
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া দুই দেশেই রাশিয়ার স্বার্থ জড়িত আছে বলে রাশিয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছে। দুই দেশ সংঘাত এড়িয়ে গেলেই রাশিয়ার ফায়দা, তাছাড়া রাশিয়া নিজের মুসলিম অধ্যুষিত ককেশীয় অঞ্চলের চেচনিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বরাবর শংকিত।
ইরানও এ সংঘর্ষে নিজেদের জড়াতে চাচ্ছে না এবং সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর নিজের উত্তর অংশ রক্ষা করার জন্য সীমান্তে ২০০ ট্যাংক মোতায়ন করেছে। ফ্রান্সের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হলেও আর্মেনিয়ার জন্য তা ছিলো অকার্যকর। ফ্রান্স খুব করে যুদ্ধে আর্মেনিয়াকে সহায়তা করতে চাইলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবধান গড়ে দিতে পারেনি।
১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আর্মেনিয়ার সবচেয়ে শক্তির জায়গা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠীর অবস্থান। এখানে লক্ষণীয় যে পশ্চিম ইউরোপের সংখ্যায় সবচেয়ে বেশী আর্মেনিয়ানদের বসবাস ফ্রান্সে। সেসব দেশে আর্মেনিয়ানরা মূলত শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আজারবাইজানের বিপক্ষে আর্মেনিয়ার জন্য লবিং করে, তবে এবার তাদের কোন পদক্ষেপ সফল না হওয়ার কারণ এটা যে অন্য কোন দেশই এ সংঘাতে নিজেদের জড়াতে চাচ্ছে না।
নাগারনো-কারাবাখে সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের এবারের সংঘাতে আধুনিক যুদ্ধের নতুন মাত্রার সংযোজন লক্ষ্য করা গেছে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে;
১. ড্রোন ওয়ারফেয়ার: আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত ড্রোন ওয়ারফেয়ারে দক্ষতা অর্জন করায় আজারবাইজান মূলত আর্মেনিয়ার ট্যাংক ও ফিল্ড আর্টিলারিকে পুরোপুরি অকার্যকার করে ফেলেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও তুরস্কের ড্রোন ওয়ারফেয়ার দেখা গেলেও তা ছিলো মূলত সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গিবাদী শত্রুর বিপক্ষে। এবারই প্রথমবারের মতো আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার এবং এ কারণে যুদ্ধের ময়দানে নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ প্রকাশ্যে এবারের যুদ্ধে তুরস্কের ড্রোন প্রযুক্তির কার্যকারীতার প্রশংসা করে তুরস্কের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তুরস্কের পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রদানকৃত 'হ্যারোপ' ড্রোন নাগারনো-কারাবাখের যুদ্ধ ময়দানে কামিকাজি হিসেবে আজারি সামরিক বাহিনীকে বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে সুবিধা দিয়েছে।
২. মার্সেনারিজ: আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্কের ভাড়া করা সিরিয়ান সৈন্যের অংশগ্রহণের অভিযোগ এসেছে। মূলত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নানান হাত ঘুরে ওবামা প্রশাসনকালে যুক্তরাষ্ট্রের 'টিম্বার সিকামোর প্রোগ্রাম' এর মাধ্যমে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পেয়েছে আসাদবিরোধীরা এবং পরবর্তীতে ট্রাম্প প্রশাসন এ প্রোগ্রাম বাতিল করলে সেসব সৈন্যদের একটি বিরাট অংশ নিজেদের মার্সেনারি বা ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে উপস্থাপন করে। তুরস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তুরস্ক এসব ভাড়াটে সৈন্যদের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করছে নিজের সামরিক শক্তির প্রক্সি হিসেবে।
নাগরনো-কারাবাখেও সিরিয়ান সৈন্যদের নিহত হওয়ার খবর এসেছে বিবিসিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। যদিও তুরস্ক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আবার আর্মেনিয়ার পক্ষেও ভাড়াটে সৈন্য নামানোর অনেকের অভিযোগের তীর ফ্রান্সের দিকে।
৩. ওয়ারটাইম প্রোপাগাণ্ডা: যুদ্ধকালীন প্রোপাগাণ্ডা নতুন কিছু না; শত্রুকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার তরিকা আলেকজান্ডার থেকে চেঙ্গিস খান হয়ে বিশ্বযুদ্ধ কিংবা একাবিংশ শতাব্দির যুদ্ধ ক্ষেত্রে বহুলব্যবহৃত একটি অস্ত্র। সে অস্ত্রের সফল প্রয়োগ করেছে এবার আজারবাইজান। যুদ্ধে সৈন্যদের উদ্দীপনা বাড়াতে আজারি সামরিক বাহিনীর প্রযোজিত ও নির্মিত হেভিমেটাল ভিডিও গান ছিলো আলোচনার অন্যতম বিষয়। তাছাড়া আজারবাইজান যুদ্ধে তাদের আক্রমণের দৃশ্যের নাটকীয়তাকে ধারণ করে নিজেদের অগ্রসরমান ঘটনা জানান দিয়েছে আর্মেনিয়াসহ নিজেদের জনগনকে। এতে একই সাথে নিজেদের সৈন্য ও জনগনের মনোবল বৃদ্ধি করেছে এবং আর্মেনিয়ানদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করেছে। এবং এ দৃশ্য ধারণ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে ড্রোনের গাঁয়ে অবস্থানকারী অত্যাধুনিক ক্যামেরা।
ঐতিহাসিকভাবে পর্যালোচনা করলে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছি আমরা, তারপরও আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার এ যুদ্ধ একাবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যান্য জাতিরাষ্ট্রসমূহের জন্য লক্ষণীয়।
- লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়