পশ্চিমবঙ্গে নেতা বাগানোর রাজনীতিতে জনরায়ের মূল্য কোথায়?
হুমায়ুন কবির, পশ্চিমবঙ্গের একজন রাজনীতিবিদ। ১৯৮২ সালে রাজ্য কংগ্রেসের রাজনীতিতে যুক্ত হন। প্রায় ত্রিশ বছর টানা রাজ্য কংগ্রেসের রাজনীতি করেছেন। ২০১১ সালে কংগ্রেসের টিকেটে বিধায়ক হওয়ার পর রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে ২০১২ সালে তৃণমূলে যোগদান করেন। ২০১৫ তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হন। পরবর্তীতে আবারও ফিরে যান পুরোনো দল কংগ্রেসে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে হঠাৎ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে যোগ দেন বিজেপিতে। গেরুয়া শিবিরের হয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানের কাছে হেরে যান। এনআরসি ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকলে ২০২০ সালে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি ও সাংসদ আবু তাহের খানের হাত ধরে ফের তৃণমূলে যোগ দেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভরতপুর থেকে তৃণমূলের টিকেটে জয় লাভ করেন হুমায়ুন।
হুমায়ুন কবির একটি উদাহরণ মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি মানেই দলবদল। আজ এ দলে, তো কাল অন্য দলে। একসময়ে জনসভায়, টকশোতে যে দলের বিরুদ্ধে বিষেদাগার ছড়াতেন, সময়ের পরিক্রমায় সেই দলের পতাকা ধরেছেন, এমন উদাহরণ আছে অজস্র। পশ্চিমবঙ্গের জনগণও দল পাল্টানো নেতাদের বারবার নির্বাচন করে দলবদলের রাজনীতিকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। দলবদলের মিছিলে বিভিন্ন সময়ে যোগ দিয়েছেন অসংখ্য নেতা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেলে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে যায়। তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায় ও সব্যসাচী দত্ত এই দল বদলের মিছিলে যোগ দেন। দলবদলুদের 'গদ্দার ও বেইমান' হিসেবে প্রচার করতে থাকেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের নির্বাচনী গান খেলা হবে'র একটি লাইনে সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছিল দলবদলুদের- মুকুল, শোভন, সব্যসাচী, বিজেপি আজ আস্ত রাঁচি। ভোটের রাজনীতিতে মুকুলকে বলা হয় চাণক্য। সেই চাণক্যকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ দিয়ে সম্মানিতও করেছিল বিজেপি। কিন্তু মুকুল বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর আবারও ফিরে এসেছেন তৃণমূলে। সব্যসাচীও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে মমতার জয়ের পর ফিরে এসেছেন, আপ্লুত হয়ে তৃণমূল ও মমতা ব্যানার্জীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। অথচ সব্যসাচী বিজেপিতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জীকে সর্বোচ্চ আক্রমণ করে কথা বলেছেন। সাত-ঘাটের জল খাওয়া 'গদ্দাররা' এখন ঘরের ছেলে হয়ে ফিরে এসেছেন।
উনিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের বেইমান, গদ্দার বলে প্রচার করলেও একই সময়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ জেলায় বিজেপির কৌশল অবলম্বন করে তৃণমূল। বাম আমলেও যে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের একক আধিপত্য ছিল, সেই কংগ্রেসের নেতা ভাঙিয়ে রাজ্য কংগ্রেসকেই দুর্বল করে দেয় তৃণমূল। মুর্শিদাবাদের তুমুল জনপ্রিয় নেতা আবু তাহের খান তৃণমূলে যোগ দেন লোকসভা নির্বাচনের আগে। তাকে করা হয় লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী। ফলাফল, আসনটিতে জয় পায় তৃণমূল। এছাড়া, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসেন দুইবারের কংগ্রেস বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরিসহ আরও কয়েকজন কংগ্রেস নেতা।
মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের এই সাফল্যের নেপথ্য নায়ক ছিলেন তৎকালীন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক ও মমতার বিশ্বস্ত সহচর শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব নেওয়ার পরই একের পর এক কংগ্রেস নেতাকে নিয়ে আসেন নিজের দলে। যার ফলে কংগ্রেসের গড় ভাঙতে শুরু করে।
২০২০ সালের মাঝামাঝি মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবলদ হয়। বিলুপ্ত হয় জেলা পর্যবেক্ষকের পদ। শুভেন্দুকে সরিয়ে নেওয়া হয় মুর্শিদাবাদ থেকে। গুঞ্জন ওঠে, শুভেন্দুর কলকাঠিতেই লোকসভা ভোটে মালদা, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলিতে বাজে ফলাফলের মুখোমুখি হতে হয় তৃণমূলকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুভেন্দুর সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তৃণমূল শুভেন্দুকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে-আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূলের সঙ্গে দুই দশকের সম্পর্কের ইতি টানেন শুভেন্দু। যোগ দেন দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দী বিজেপির ঘাঁটিতে।
কিছুদিন আগেও মঞ্চে যিনি বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও শ্লোগানে কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতেন, তিনিই শেষমেশ বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলকে পিসি-ভাইপোর দল হিসাবে প্রচার করতে শুরু করেন। এখানেই শেষ নয়, একসময়ে মুর্শিদাবাদে মুসলিম নেতাদের শ্রদ্ধার পাত্র শুভেন্দু শুরু করেন সাম্প্রদায়িক আক্রমণ। মমতাকে বেগম বলে সম্বোধন করা শুরু করেন বিভিন্ন জনসভায়। মাথায় কাপড় দেওয়ায় তাকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা ব্যানার্জির ভাইয়ের ছেলে অভিষেক ব্যানার্জির ক্ষমতায়নকে গ্রহণ করতে পারেনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু ও মমতা ব্যানার্জী নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মমতাকে হারিয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর বিজেপি তাকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবে মনোনীত করে।
শুভেন্দু দল থেকে বের হয়ে একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক ও সাংসদকে বিজেপিতে টানতে শুরু করেন। তৃণমূল ছাড়াও বাম ও কংগ্রেসের কয়েকজন নেতাকেও দলে টানতে সক্ষম হয় বিজেপি। দলবদলের খেলায় তৃণমূল একের পর এক ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খায়। তৃণমূল তখন মমতা ব্যানার্জিকে দলের একক আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। দলটির নির্বাচনী গানেও সেই প্রবণতা দেখা যায়- তৃণমূলের ভাঙিয়ে নেতা, নয়কো সহজ ভোটে জেতা, দিদির ছবি সরবে যবে, বন্ধু সেদিন খেলা হবে।
২০১৬ তে ফাঁস হওয়া নারদা কেলেঙ্কারিতে সম্প্রতি জেল খেটেছেন তৃণমূলের কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। এই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছিল শুভেন্দুরও। সেসময়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে শুভেন্দুর ঘুষ গ্রহণের ভিডিও গণমাধ্যমকে দেখিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। দাবি করা হয়েছিল শুভেন্দু একজন চোর। কালক্রমে সেই শুভেন্দু এখন রাজ্য বিজেপির পোস্টার বয়।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের রাজনীতিতে বড় শক্তি সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটার। বামদের পতন ও মুর্শিদাবাদে নেতা ভাঙানোর পর পুরো পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট এখন তৃণমূলের একচ্ছত্র দখলে। মমতা এজন্য সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকেন। ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয় বরাবরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের আক্রমণের জন্য সমালোচিত। ২০১৮ সালে আসানসোলের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় খুন হন সিবতুল্লাহ রশিদি নামক এক মুসলিম কিশোর। এই দাঙ্গায় আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়'র ইন্ধন যোগনোর অভিযোগ আছে। মমতা ব্যানার্জীকে মুসলিম তোষণকারী হিসাবে বেগম বলে সম্বোধন করা থেকে শুরু করে তৃণমূল দলের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য বরাবরই তৃণমূলের চক্ষুশূল ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই তৃণমূল আর না শিরোনামে বিজেপির নির্বাচনী গানের লেখা, সুর এবং কণ্ঠ সবই ছিল তার। সম্প্রতি এমন একজন সাম্প্রদায়িক ও কট্টর তৃণমূল বিরোধীকে নিজেদের দলে টেনেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলটি।
২০১৯ সালে এক ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যে বাবুল সুপ্রিয়ের কাছে গরুর দুধে সোনা পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চান তৃণমূল কর্মী মুস্তাফিউর রহমান। প্রতিউত্তরে মুস্তাফিউরের কাগজ (ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ) দেখতে চেয়ে এনআরসি ও সাম্প্রদায়িক বিতর্কে জড়ান বাবুল। ওই সময়ে মুসলিম যুবকের পক্ষে অবস্থান নেন তরুণ সিপিআইএম নেতা শতরূপ ঘোষ। এবার সেই বাবুলের তৃণমূল যাত্রায় পুরানো ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন শতরূপ। বাবুলের দল বদল নিয়ে বাম সমর্থকদের প্রশ্নবাণে নাকাল হয়ে পড়েন তৃণমূল কর্মী মুস্তাফিউরও।
তবে, এখন সবকিছু ছাপিয়ে অসাম্প্রদায়িক দল তৃণমূলের ঝাণ্ডা তুলে নিয়েছেন বিজেপি থেকে নির্বাচিত সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।
পশ্চিমবঙ্গে দলবদলের রাজনীতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব দেখা যায় রাজ্যের সাবেক শাসক দল সিপিআইএমকে। অথচ তৃণমূলের বড় অভিযোগ সিপিআইএম তৃণমূলকে ঠেকাতে তাদের ভোটারদের বিজেপিতে ভোটদানে উৎসাহিত করছে। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সবসময়ই বিরোধীদের চক্ষুশূল। বামদের 'বিজেমূল' (তৃণমূল ও বিজেপির গোপন আঁতাত) তত্ত্বের বিরোধিতা করে তিনি একবার এক টকশোতে হিসাব দেখান, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে অনেক আসনেই তৃণমূল আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। কিন্তু বাম প্রার্থীদের ভোট ব্যাপকহারে কমে গেছে এবং সেই ভোটগুলোই বিজেপির আসন জয়ে ভূমিকা রেখেছে।
আবার দল বদলের কলঙ্ক যে সিপিআইএমের একদম নেই, এমনটা নয়। সম্প্রতি বিজেপির রাজনীতিতে যুক্ত দুই অভিনয়শিল্পী রুপা ভট্টাচার্য এবং অনিন্দ পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিপিআইএমে যোগ দেওয়া নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়। এসময় দলটির দীর্ঘদিনের কর্মী অভিনয়শিল্পী রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীলেখা মিত্রসহ অনেকেই প্রতিবাদ জানান।
২০১১ সালে সিপিআইএমের ভরাডুবির পর দলটির অন্যতম জনপ্রিয় নেতা রেজ্জাক মোল্লা বুদ্ধদেব বসুসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের প্রকাশ্য সমালোচনা করতে থাকেন। একপর্যায়ে টানা ৩৭ বছরের বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জীর হাত থেকে পতাকা নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দেন 'চাষার ব্যাটা' নামে পরিচিত এই কৃষক আন্দোলনের নেতা।
মমতা ব্যানার্জী রেজ্জাককে ভাঙর বিধানসভা থেকে প্রার্থী করলে তিনি জয় লাভ করেন। অথচ প্রবীণ এই নেতাকে ২০১৩ সালে ভাঙরে হামলার মুখে পড়তে হয়। রেজ্জাক দাবি করেছিলেন, ভাঙরের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম সেই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া, ২০১১ সালের পর তিনি একাধিকবার তৃণমূলের হামলার শিকার হন।
পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই মুহূর্তে রাজ্যের সংখ্যালঘু রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ। মমতা ব্যানার্জির ছায়াসঙ্গী হিসাবে পরিচিত এই নেতা দলবদলের রাজনীতিকে দেখেন বড় চমক ও দলীয় সাফল্য হিসাবে। এরকম অনেক নেতাই দল বদলকে দলীয় সাফল্য ও কারিশমা হিসাবে দেখাতে পছন্দ করেন। সর্বশেষ বিধানসভার আগে তৃণমূলকে বিপদে ফেলে একে একে যেসব নেতারা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ফিরে আসছেন, যারা বিজেপি থেকে নির্বাচিত বিধায়ক। এছাড়া বিজেপির আরও কয়েকজন বিধায়ক তৃণমূলে যোগদান করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
অবশ্য দলবদল ও জোট বদলের বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে স্বয়ং সর্বভারতীয় তৃণমূল সভাপতি মমতা ব্যানার্জির। কংগ্রেসের রাজনীতির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই নেত্রী ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের জোটে সামিল হয়ে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে এনডিএ জোট থেকে বেড়িয়ে এসে পুরোনো দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটে অংশ নেন। নির্বাচনে বামদের কাছে হেরে ওই বছরই আবার কংগ্রেস জোট ছেড়ে এনডিএ জোটে মিশে যায় মমতার তৃণমূল। ২০০৪ সালে এনডিএ সরকারের কয়লা এবং পানি দফতরের মন্ত্রীত্ব পান মমতা। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে এককভাবে লড়ে আবার ২০০৯ এর লোকসভা ভোটে জোট বাঁধেন কংগ্রেসের সঙ্গে। ২০১১ সালে এককভাবে বাম-কংগ্রেস জোটকে বিধানসভা ভোটে হারিয়ে ক্ষমতায় আসার পর বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপর অবর্ণনীয় নিযার্তন চালায় তৃণমূল। আবার ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে বিজেপির তোপ দেখে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ঠেকাতে বাম-কংগ্রেসকে আহ্বান করেও সাড়া পাননি মমতা। ২০২১ সালে লোকসভা ভোটের আগেও একই রকম আহ্বান জানানো হয়েছিল। আগামী লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে সম্প্রতি মাঠ গোছানো শুরু করেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠনের জোর সম্ভাবনা তৈরি হলেও মমতা এখন এককভাবে মোদি-বিরোধী মুখ হিসেবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নিজ দলের প্রচারেই মনযোগ দিচ্ছেন।
দলবদলের এই রাজনীতিতে জনরায়ের মূল্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। দলত্যাগকারীদের মধ্যে খুব অল্প কয়েকজনই সাংসদ, বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এর ফলে জনগণের রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। জনগণ রাজনৈতিক দলের হিসাবে নেতা নির্বাচন করার পর, সেই নেতা অন্য দলে যোগ দিলে জনগণের সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী দলত্যাগ বন্ধে আইন করলেও সেই আইনের কোনো বাস্তবায়ন নেই। দলবদলের আইনকে তোয়াক্কা না করেই জনপ্রনিধিরা এক দল থেকে অন্য দলে ঘুরছেন নিজেদের স্বার্থে। দলও তাদের স্বার্থে নেতাদের গ্রহণ করছেন। পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার এই দলবদলের রাজনীতিতে জনরায়ের দুর্দশাটুকু বাদ দিলে দেখা যায়, উভয়পক্ষেরই শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে। তাই দলবদল চলছে তার নিজস্ব গতিতে।
- লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
- ইমেইল: [email protected]