ম্যারাডোনাকে এক ভক্তের খোলা চিঠি!
প্রিয়জনেষু দিয়াগো ম্যারাডেনা,
আপনি অল্পক্ষণ আগে আমাদের সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে পরপারে চলে গেলেন।
আপনি ১৯৮৬'র বিশ্বকাপ যখন জেতেন তখন আমার ৭ বছর বয়স। আমার খুব একটা মনেও নেই আপানর সেই অতিমানবীয় কীর্তির স্মৃতি। পরে যখন ১০-এ পা দিলাম আর আপনার ব্যাপারে আমার বাবার কাছে শুনলাম, এক নিমিষেই ফুটবল খেলাকে ভালোবেসে ফেললাম। ১৩ বছর বয়সে ফুটবল খেলতে গিয়ে ডান পা ভেঙ্গে ফেললাম। আমার ছোটবেলার পাবলিক স্কুলের বন্ধুদের সাথে – যারা আমার এখনো প্রাণের বন্ধু – কাদের, আরিফ, শাকিল, সাজিদ, মাসুম, খোরশেদ, ইকরাম, পারভেজ – সবার সাথে আমার প্রথম দিনের স্কুলের পরিচয় আপনার দেয়া ভালোবাসার ফুটবল খেলার মাঠে। বড়ই রঙিন সেই স্মৃতি।
যদিও আপনাকে আমি সামনা-সামনি কখনও দেখিনি, কিন্তু ছোটবেলায় আমার মনে হত আপনি আমাদেরই একজন। আপনার পাগলামি – বেলেল্লাপনা –উচ্ছৃঙ্খলতা আমাকে ব্যথিত করত, জার্মান আর ব্রাজিল সমর্থকরা আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করত; যা আমাকে আপনার উপর রাগিয়ে দিত। তারপর আমি আপনাকে দেখলাম – বিস্ময় নিয়ে দেখলাম ১৯৯০'র বিশ্বকাপে – ব্রাজিলের অবিরাম আক্রমণের বিপক্ষে – এক মুহূর্তের ম্যাজিকে – ক্যানিজিয়াকে বল পাস দেয়ার সময়। আপনি হলেন আমার কাছে সেই আত্মীয়'র মত যার কলঙ্ক এক নিমিষেই আমরা ভুলে যাই যখন তার কোনো ভালো খবর পাই। জার্মানরা জোচ্চুরি না করলে ১৯৯০ সনে আমরা নির্ঘাত আবার বিশ্বকাপ জিতে জেতাম!
হয়ত আপনার সেই পাগলামি এবং উচ্ছৃঙ্খলতাই আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে আপনি ফুটবল খেলায় অতিমানব হলেও আসলে আপনি আমাদের মতই রক্ত-মাংসের-দোষগুণের-হাসিকান্নার মানুষ – ইংরেজিতে যাকে বলে a man of flair and flaw. আমরা বাঙালিরা অনেকটাই আপনার মতো – আবেগপ্রবণ এবং সজ্জন।
আপনাকে আমি কোনদিন ভুলবো না। আপনার দেয়া ভালোবাসার ফুটবল আমি এখন আমার ১৩ বছরের ছেলের সাথে খেলি আর রোমাঞ্চিত হই। আপানাকে অনেক ধন্যবাদ সেই রোমাঞ্চ ছড়াবার জন্য।
আমার ঘোরশত্রু ব্রাজিলের কিংবদন্তী পেলে আপনার বিদায়বেলায় লিখেছেন – "আশা করি একদিন স্বর্গে আমরা এক সঙ্গে ফুটবল খেলবো"। আমি অপেক্ষায় রইলাম সেই দিনটির জন্য – আমরা গ্যালারিতে বসে সে খেলা দেখবো।
ওপারে ভালো থাকবেন।
৮০ ও ৯০ দশকের ফুটবল-পাগল-আর্জেন্টিনা সাপোর্টার-দামাল ছেলে-মেয়েদের পক্ষ থেকে।
লেখক: আইনজীবী