ফ্যাভ্রি রকোউচাট সিনড্রোম: বয়স বাড়ার আগেই বুড়িয়ে যাওয়া?
বয়স বাড়লে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়বে এটা স্বাভাবিক। বলিরেখা দেখা দেবে, ত্বক কিছুটা কুঁচকে যাবে—এটা প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়ে থাকে। সালাম সাহেব বয়স বাড়ার এই গতিধারা মাথায় নিয়েই ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। যেহেতু বয়সের অঙ্কটা মধ্য থেকে প্রৌঢ়ের কোঠায় ঢুকবে ঢুকবে করছে আর অর্ধাঙ্গিনীও একটু উন্নাসিকতাভরে আজকাল প্রায়শই বলেন, 'একটু বেশিই বুড়িয়ে গেলে।'
সালাম সাহেব আপাদমস্তক একজন সৌখিন মানুষ। নিজেকে পরিপাটি রাখা বা একটু গুছিয়ে উপস্থাপন করে মানসিক বা শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করেন। পেশাগতভাবে কর্পোরেট সাংস্কৃতিও তাকে এভাবে চলতে অভ্যস্ত করেছে। কিন্তু হঠাৎ বুড়িয়ে যাবার বিষয়টি তাকে একটু ধাক্কা দিল।
চর্ম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সালাম সাহেবের পূর্বপরিচিত। হাসিখুশি আন্তরিক গলার স্বর, মনোযোগ দিয়েই কথা শোনেন। বয়সের হাল একটু টেনে ধরার প্রশ্নে তিনি গুরুত্ব দিয়েই বোঝালেন কীভাবে এজিং প্রসেস কমানো যায়। কিন্তু তার সাথে একটা নতুন তথ্য ভদ্রলোক দিলেন—সালাম সাহেবের এই হঠাৎ বুড়িয়ে যাবার বিষয়টি নাকি একটি অসুখ। বেশ খটমটে নামটি, Favre-racouchot syndrome বা ফ্যাভ্রি রকোউচাট সিন্ড্রোম। অসুখটির কারণে শুধু ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা বলিরেখা এগুলো পড়েনি, সাথে আছে ব্রন অর্থাৎ ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস, সিস্ট বা ত্বকের তৈল গ্রন্থির একধরনের প্রদাহ এবং সূর্যরশ্মির সংবেদনশীলতার কারণে ত্বকের কিছু অংশ কালোও হয়ে গেছে। বিশেষ করে গাল, নাকের দুইপাশ, কাঁধ এবং কপাল—এই অঞ্চলে উপসর্গগুলো বেশি।
সালাম সাহেব কারণ জানতে চাইলে উত্তর পেলেন, প্রধান কারণ হলো সূর্যরশ্মি বা আলোর প্রতি ত্বকের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা; কিছু কিছু মাইক্রোনিউট্রেয়েন্টসের ঘাটতি বা ফর্সা ত্বকের মানুষ।
সালাম সাহেব প্রশ্ন করলেন, রোদে তেমন যাওয়া হয় না বা মোটামুটি পুষ্টিকর খাবারই তো খাওয়া হয়; তাহলে? উত্তর পেলেন, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া হয়, কিন্তু জিংকসমৃদ্ধ খাবার দেখা গেল তার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অনুপস্থিত। রৌদ্রে যান না কিন্তু এনার্জি বালব বা বিভিন্ন গেজেট তার নিত্যকার সঙ্গী। সেই অনুযায়ী তিনি সান্সক্রিম ব্যবহার করেন না। সালাম সাহেবের আর একটা বদভ্যাস আছে,সেটি হলো তিনি চেইন স্মোকার—এটিও একটি কারণ।
বুড়ো বয়সের এই ব্রনকে Senile comedones বলা হয়ে থাকে মেডিকেলীয় ভাষায়।
সালাম সাহেব রোগ জানলেন, কারণ জানলেন, সাথে চিকিৎসাও জানতে চাইলেন। তবে একটু কৌতূহল রোগের উৎপত্তি গত ইতিহাস জানার।
এটি মূলত মরিস ফেব্রি নামক একজন আমেরিকান চর্ম বিশেষজ্ঞ ১৯৩০ সালে ব্যাখ্যা করে ন। সাধারণত ১০ শতাংশ আমেরিকান নাগরিক এই রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগ সাধারণত শারীরিক তেমন ক্ষতি করে না, এটি কসমেটিক ইস্যু বা ত্বকের সৌন্দর্যের একটা বিষয় হিসাবেই বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব বা আক্রান্তের হারের কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে নগরায়ণ বা আমাদের জীবনযাত্রার আধুনিকতার কারণে শহরকেন্দ্রিক একটি শ্রেণির মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এ রোগে তেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। চিকিৎসা হিসেবে লেজার করা হয়। ত্বকে ব্যবহারের জন্য রেটিনয়েড-জাতীয় মলম দেওয়া হয়। অবশ্যই ভালো মানের একটি সান্সক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ধূমপান পরিহার, গেজেটের ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার অনেকাংশেই ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
- ডা. শেখ আরিফুর রহমান: চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা